“পুরো বাড়িটাকে আমার জঙ্গল বানিয়ে ছেড়েছে এই ছেলেটা।
আর স্টোর রুমটার অবস্থা দেখো, মানুষ তো ছাড়ো ভূতও এখানে প্রবেশ করবে না।
এসব আমার বাড়িতে চলবে না। এক্ষুনি স্টোর রুমটা পরিষ্কার করবে চলো আমার সাথে।”
আমি এক হাতে ঝাঁটা নিয়ে বাড়িটা পরিষ্কার করতে করতে বললাম ।
সে: ১ সেকেন্ড! এটা তোমার বাড়ি কবে থেকে হল ?
“ঠিক যবে থেকে এই বাড়ির মালিকটা আমার হয়েছে “
সে: উফ! তুমি তো বিয়ের পর দিন দিন ভীষণ সাহসী হয়ে যাচ্ছো।
আমার আগের তানিটা যে কোথায় গেল…
যে আমার দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত কথা বলতে পারতো না। লজ্জা লাল হয়ে যেত, যদি কখনো আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে ফেলতাম ।
আর এখন দেখো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে শাশাচ্ছে।
“তোমার যদি বাজে বকা বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে চল আমাকে হেল্প করবে। “
সে: যাচ্ছি তো!
বলেই আমরা স্টোর রুমে ঢুকলাম । সেটা পরিষ্কার করার জন্য।
ঢুকেই আমার মাথায় হাত।
এটা স্টোর রুম নাকি ভাগাড় ।
মনে মনে 101 গালি দিতে দিতে তোর রুমটা পরিষ্কার করতে লাগলাম।
স্টোর রুমটা আমরা দুজন মিলে পরিষ্কার করছিলাম এমন সময় ভুলবশত একটা শেল্ফের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম।
একটা বড় সাইজের বাক্স উপর থেকে নিচে পরলো। আমি কোনরকম ওখান থেকে সরে গেলাম।
এইরে এক্ষুনি বাক্সটা আমার উপর পড়তো।
সে : দেখি ,লাগেনি তো তোমাকে?
“না লাগেনি …কিন্তু? এই বাক্সটা তো আমি আগে কখনো দেখিনি ! কি আছে এতে?
সে বাক্সটা দেখে থত মত খেয়ে গেল।
সে : কই কি, কিছু না তো….এমনি ওটা ছাড়ো ….
আমার তার কথা শুনে কিছুটা সন্দেহ হলো । কি আছে এতে? আমি তো এবার দেখেই ছাড়বো ।
সে বাক্সটা তুলতে এসেছিল, তখন আমি তার হাত ধরে নিলাম।
“ছাড়ো বাক্সটা ….আমি দেখবো ভেতরে কি আছে । “
সে: আরে কিছু নেই ….
“আমি দেখবো বলেছি, মানে আমি দেখবো। “
আমি তার হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে নিচে বসলাম । সে ওখানে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করতে লাগলো ।
বাক্সটাতে লক দেয়া।
“লকটা কি এটার? “
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ।
সে :আরে ভুলে গেছি …অনেক দিন আগের বাক্স এটা…..
আমি তার দিকে কিছুটা আরচোখে দেখে, বাক্সটার লকটা খুলায় মনোযোগ দিলাম ।
অনেকগুলো লক ট্রাই করার পর হুট করে আমার মনে আসলো নিজের ডেট অফ বার্থ দিয়ে দেখি, খুলে নাকি!
অবাক করা ববিষয়, মার ডেট অফ বার্থ দেয়ার পর পরই বাক্সটা খুলে গেল ।
আমি সেটা দেখে কিছুটা মুচকি হাসলাম ।
এবার আমি বাক্সটা খুলতেই কিছু সময়ের জন্য বাক্সটা থেকে স্তব্ধভাবে চেয়ে থাকলাম ।
“এগুলো তো? “
সে : হ্যাঁ! এগুলো আমাদের গড়ে তোলার ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্ত এবং স্মৃতিগুলি ।
বাক্সের ভেতর থেকে প্রথমেই যেটা বার করলাম সেটা ছিল একটি চিঠি।
যেটা প্রথমবার আমি তার জন্য লিখেছিলাম।
তখন তার সঙ্গে আমার রিলেশনটা শুরু হয়নি।
সে এবার আমার পাশে বসে আমার হাত থেকে চিঠিটা নিল।
এবং চিঠিটি খুলে পড়তে লাগলো …….
“Happy birthday dear…..
If you don’t mind
Can you be friends with me……
From MOON”
খুব সুন্দর ইংলিশ লেখো তো তুমি ……
“হাসবে না আমার উপর একদম ঠিক আছে ।
তখন আমি সেই নতুন নতুন ইংলিশ শিখেছিলাম । তুমি তো সে সময় কি লেখা ছিল সেটাও হয়তো পরতে পারনি। “
সে : হ্যাঁ সেটাই । আপনি লিখতে পারেন আর আমি পড়তে পারি না।
আমি তার দিকে বিরক্তিকর একটি চাহনী দিলাম।
“তখন তুমি আমাকে একবার পর্যন্ত বলনি তুমি আমাকে লাইক করো। ঠিক আছে !
আমি নিজে থেকে এসে চিঠিটা দিয়েছিলাম। “
সে : কিন্তু সেইদিনই তো তুমি তোমার লাভটা পেয়েছিলে। যেটা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম । ঠিক একই দিনে।
“সেটা তো আমি আগে তোমাকে দিয়েছি, ঠিক তারপরে তুমি আমাকে লেটারটা দিয়েছো। “
সে: কিন্তু যখন তোমার কাছে আমি লেটারটা পাঠিয়েছি তখন পর্যন্ত আমি তোমার লেটারটা হাতে পাইনি ।
আমি জানতাম না তুমি আমাকে এটা দিয়েছিলে সেই দিনে। কারণ সেদিন আমি স্কুল যাইনি।
” মহান কাজ করে ফেলেছিলেন। ”
বলেই আমরা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম ।
হ্যাঁ , আমরা দুজনেই একে অপরকে ঠিক একই দিনে একই সাথে চিঠি দিয়েছিলাম। অথচ এটা জানতামও না যে সেও আমাকে চিঠি দিচ্ছে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ। চিঠি কথাই মনে পড়ল, আমার খুব ভালো করে মনে আছে চিঠিটা তে তুমি লিখে ছিলে,
“My little dear taniya “
Little dear মানে কি?
তুমি একটা মেয়েকে প্রেমপত্র দিচ্ছ সেখানে তুমি সেই মেয়েটাকে সম্বোধন করছো
“My little dear” “
সে: আমি তোমাকে তখন little এই কারণে বলেছিলাম কারণ তখন তুমি little ই ছিলে ।
তখন কেন ,তুমি এখনো little ই আছো আমার সামনে।
“আমি মোটেও little নই।
তুমি ছয় ফুট হাইটের হতেই পারো তাহলে আমার কি 5.3 ফুটের এর কোন মান নেই নাকি।
এ ছাড়ো আমাকে বাকিগুলো দেখতে দাও ।
তারপরে বাক্সে দেখতে পেলাম একটি চুলের কাঁটা।
কাঁটাটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখার পর কিছু একটা আমার মনে পড়ল।
“আরে এটা তো ……”
সে: হ্যাঁ হ্যাঁ …..এটা তোমারই।
“কিন্তু এটা তোমার কাছে গেল কি করে? এটা আমি কত খুজছিলাম ……”
সে: একটু ভালো করে মনে করে দেখো তো …এটা আমার কাছে কি করে এলো!
তারপর চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম । হুট করে ৯ বছর আগের কিছু স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।
তখন অতিরিক্ত গরম থাকায় স্কুলে চুলটা গুটিয়ে তাতে এই কাঁটাটা দিয়ে রেখেছিলাম আমি।
হুট করে কেউ একজন পেছন থেকে এসে আমার চুলের কাঁটাটি খুলে দেয়।
পেছনে ঘুরে তাকাতে দেখলাম, সেই মানুষটি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার হাতে আমার চুলের কাঁটাটি আমার কমর পর্যন্ত চুলটা ছড়িয়ে পড়ল পিট জুড়ে ।(এত লম্বা চুল আমার জীবনেও হয়নি )
তখন সে আস্তে করে বলেছিল। “চুলটা পরেরবার থেকে খুলেই রেখো, তোমাকে খোলা চুলে খুব সুন্দর লাগে। “
কথাটি মনে পড়তে আবার চোখ খুলে তার দিকে তাকালাম । এবার বুঝতে পারলাম সে কাঁটাটি তার কাছে গেল কি করে।
সেও আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হাসলো।
আমি আবারও বাক্সটা দেখায় মনোযোগ দিলাম ।
এবার বাক্সটা থেকে বেরোলো একটি স্কেচবুক ।
স্কেচবুক টাকে আমি চিনি । সব সময়ই সে টিফিন টাইমে বাইরে থামে বসে এটাতে কিছু না কিছু একটা আঁকতো। আজকে অবশেষে সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
স্কেচবুক টার প্রথম পাতা খুলতেই দেখতে পেলাম ,একটি নারী অবয়ব। মুখটা পরিষ্কার নয় ,কিন্তু মানুষটাকে চিনতে আমার অসুবিধা হলো না।
আমি জানি সেই নারীটিকে।
খোলা চুল দিয়ে চেহারাটি ঢাকা। একটি হাত গালে দিয়ে কিছু একটা লিখে চলেছে ।
সেই দৃশ্যটি খুব সুন্দর করে এই পাতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
দ্বিতীয় পাতাটি উল্টালে দেখতে পেলাম আবারো সেই নারী আবার অবয়বটিকে।
ক্লাসরুমের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে কিছু একটা দেখছে।
“এটা তুমি কখন আঁকলে ?”
সে : যখন তুমি আমায় দেখতে ব্যস্ত ছিলে ।
“তারমানে তুমি জানতে ,আমি ওখানে দাঁড়িয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি রোজ”
সে: অবশ্যই আমার আশেপাশে আপনার অস্তিত্ব আমি খুব ভালোভাবে টের পেতাম ।
আবারো পরের পাতা উল্টাতে দেখতে পেলাম সেই নারী অবয়বটি তার বন্ধুদের সাথে গোল করে বসে কথা বলছে।
“তারমানে তুমি টিফিনের সময় বাইরে বসে অন্য কিছু না , বরঞ্চ আমি কি করছি সেটা কে ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে তাই না !”
সে :আপনি ছাড়া যে আর অন্য কিছু আমার চোখে পড়তো না ।সেজন্য আমার সামনে সবথেকে সুন্দর দৃশ্যটা ফুটাতে ব্যস্ত থাকতাম আমি খাতার পাতাতে।
তার কথায় কিছুটা লজ্জা পেলাম।
স্কেচবুকের আর একটা পাতা উল্টাতেই দেখতে পেলাম, একটি পুরুষ এবং নারী অবয়ব ।
নারীটি পুরুষটির কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বাইরে কিছু একটা দেখছে এবং পুরুষটি খুব যত্ন সহকারে নারীটিকে নিজের বাহুডরে আগলে রেখেছে ।
এই ছবিটি অন্য কারো নয়, বরঞ্চ আমার আঁকা ।
আমার মনে আছে এটা আমি তার বার্থডেতে এবং আমাদের রিলেশন 1 বছর পূর্ন হবার সময় তাকে এঁকে দিয়েছিলাম ।
ছবিটির নিচে লেখা আছে…..”by MOON ”
আর ডেট আছে ” 8 march 2017 “
সত্যি আজকে নিয়ে প্রায় দশটি বছর এই মানুষটির সাথে আছি আমি ।
9 বছর প্রেম সম্পর্কে এবং একটি বিবাহিত বছর কাটাচ্ছি।
কিন্তু এই মানুষটি বারবার নতুনভাবে আমাকে তার প্রতি মুগ্ধ করে তোলে ।
প্রত্যেকটা স্মৃতি আমাদের কাটিয়ে আসা প্রতিটা মুহূর্তগুলো জীবিত ভাবে আমার চোখের সামনে আজও ভাঁসে ।
যেন এইতো কদিন আগে তাকে লুকিয়ে দেখতাম আমি, আর আজ হাত বাড়ালেই সে আমার সামনে উপস্থিত।
যেন এইতো গতকালই ছিল ,যখন রোজ স্কুলে যেতাম শুধু তাকে একবার দেখার জন্য ।
স্কুল থেকে ফেরার পথে সে রোজ তার সাইকেলটি কখনো জোরে কখনো ধীরে ধীরে আমার পেছনে নিয়ে আসতো ।
আমি বাড়িতে চলে আসার পর তারপর সে সেখান থেকে চলে যেত ।
রোজ রবিবার বিকেল বেলা একবার করে আমাদের পাড়ার সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে যেত ।
আর আমি তাকে দেখার আশাতে রোজ বাড়ির সামনে সারা বিকেল বসে থাকতাম ।
যেন এইতো গতকালই ছিল যখন আমরা চিঠির মাধ্যমে একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলতাম।
যেন এই তো গতকালই ছিল যখন সে ,আমি ক্লাসে আসার আগে আমার জায়গায় আমার পছন্দের চকলেট রেখে যেত …যাতে আমি ক্লাসে ঢুকে সে চকলেট পাই।
জানি মুহূর্তগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য নয় । কিন্তু এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই যেন মাঝে মাঝে আমাদের আনন্দের কারণ হয়ে ওঠে ।
এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলো কেই আমরা ভীষণভাবে মনে করতে থাকি ।
আমার স্বপ্ন পুরুষকে নিজের করে পাওয়া যেন সত্যিই আমার কাছে এখনো স্বপ্ন মাত্রই ।
আজ এখনো আমাদের এই দশটি বছরের কাটিয়ে আসার প্রতিটা মুহূর্ত এবং স্মৃতি আমাদের কাছে জীবিত এবং আমাদের কাছে উল্লেখযোগ্য।
এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই স্মৃতিগুলিই থাকবে আমাদের কাছে আমাদের খুশির কারণ।
2 Responses
Excelent Lekha
Thank you so much😊