হযরত মুসা(আঃ)যামানায় এক বৃদ্ধার একটি বাচ্চা মারা গেল।সেই দুঃখে বৃদ্ধা কাঁদতে লাগল,তখন হযরত মুসা(আঃ)বৃদ্ধাকে বলেন তুমি কাঁদছ কেন?তখন বৃদ্ধা উওর দিল,আমার একটি বাচ্চা মারা গেছে।তখন মুসা(আঃ)বললেন বাচ্চাটির বয়স কত?বৃদ্ধা উওর দিল ৩৫০বছর তখন মুসা(আঃ)বললেন তোমার এই বাচ্চাটি ৩৫০বছর জীবিত ছিল,কিন্তু এমন একটি যামানা আসবে সেই যামানায় নবীর উম্মতরা মাত্র ৬০ থেকে ৭০ বছর জীবিত থাকবে,আর সেই নবী হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।তখন বৃদ্ধা অবাক হয়ে বলল, তারা বালেগ হবে?মুসা(আঃ)উওর দিলেন হ্যাঁ তারা বালেগ হবে।বৃদ্ধা পুনরায় প্রশ্ন করল যে তারা এই সামান্য সময়ে বিয়ে সাদি করতে পারবে? মুসা(আঃ)বললেন তারা এই সামান্য সময়ে বিয়ে করবে এবং তাদের থেকে সন্তানও হবে।বৃদ্ধা আবার পুনরায় প্রশ্ন করল যে তারা এই সামান্য সময়ে কীভাবে নেকি এবং সওয়াব অর্জন করবে?তখন মুসা(আঃ)বললেন যে তারা এই সামান্য সময়ে এত নেকি অর্জন করবে যে,তাদের নেকি যদি আমাদের নেকির ওপর রাখা হয় তাহলে আমাদের নেকির কোনও নিশানা থাকবে না।শুধু তাদের নেকি দেখা যাবে।কারণ তখন উম্মতে মুহাম্মদিকে এমন একটি মাস দেবেন আল্লাহ তাআলা,যে মাসের নাম রমজান মাস।
এই রমজান মাসের মধ্যেই একটি রাত আছে যে রাতের নাম লাইলাতুল কদর।
সবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এটা আবার কী?আবার কেন এই রাতটাই সব থেকে important কেন?
লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। গাণিতিক ভাবে আবার কেউ বিচার করবেন না যে এক হাজার বছর সমান সমান কত মাস,এখানে একাধিক বছর বলা হয়েছে।হাজার হাজার বছর ইবাদাত করলে যে নেকি আমারা অর্জন করি এখানে এক রাত ইবাদাত করলে সেই নেকি পেয়ে যায়।এই মাসে কি হয়, আল্লাহর পক্ষ্য থেকে আল্লাহর ফেরেস্তারা নেবে আসে পৃথিবীতে।তাদের সর্দার হয়ে থাকেন জিব্রাইল (আঃ)তারা আল্লাহ রবের আদেশে এই সব করেন।এই রাতে প্রত্যেকটা বিষয়ের ফাইসাল্লা হয়।আমাদের তাকদির লেখা হয়েছে আসমান – জামিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে আল্লাহ পাক আমাদের সব কিছুর তাকদির লিখেছেন প্রথম দফায়।
দ্বিতীয় দফায় তাকদির লেখা হয়েছে যখন আমাদের রুহ্ মায়ের গর্ভে ৪ মাস ১০ দিন যখন বয়স। ওই সময় আল্লাহর ফেরেশতারা আসেন আর লিখে দেন আমাদের হায়াত, রিজিক, আর সে সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।এরপর রুহ্ টাকে ফুকে দেন তারপর সেটা নড়াচড়া শুরু করে।
এরপর তৃতীয়ত দফায় তাকদির লেখা হয় এই লাইলাতুল কদরে।যে আগামী এক বছর কি হবে? আমরা কি করব?
এই রাতে ফযর পর্যন্ত শান্তি শান্তি আর শান্তির থাকে।এই রাতে আমরা যে দোয়ায় করব,যদি আমাদের রিজিক হালাল হয় তাহলে ঠিক কবুল হবে। এই রাতে যারা ইবাদত করে তাদের চারদিকে ফেরেস্তারা সমবেত হন,তাদের দোয়ায় তারা সরিক হন তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন,ঠিক তখনই আমাদের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরতে থাকে।আর তখনই আল্লাহ পাক সেই দোয়া কবুল করেন। এই একটা রাতের ইবাদত করলে আমারা যে নেকি অর্জন করব সেটা হাজার হাজার রাতের সমান।এটা ঠিক বলা যাবে না যে ২৭ এর রাত,কি ২১ এর রাত,কি ২৫ এর রাত, কি ২৩ এর রাত,কি ২৯ এর রাত নির্দিষ্ট করে বলা যায়নি। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কদরের রাত পেয়েছিলেন এবং ওই রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল তিনি সেজ্দা করছেন মসজিদের যে নীচের মাটি আছে সেই মাটির কাদা লেগেছিল। তখন মসজিদ স্টাইল ফিটিংস ছিল না। মাটির মসজিদ থেকে তখন বিশ্ব নবী (সাঃ)বিশ্ব পরিচালনা করেছিলেন। আর এখন আমাদের তাজমহলের মতো মসজিদ সেখানে কোনও হিদায়াতের জায়গা নেই।যেখানে কোরআন পড়া হবে সেখানে উচ্চ স্বরে আওয়াজ করা যাবে না বা যেখানে নামাজ পড়া হবে সেখানেও উচ্চস্বরে আওয়াজ করা যাবে না। বা নামাজ যে পড়বে তার পাশে কোরআন পড়াও যাবে না।
এবার নবীর মাথায় কাদামাটি লেগেছিল তারমানে ওই রাতে বৃষ্টি হতে পারে।বৃষ্টি হয়েছিল তিনি নামাজ পড়েছেন তাঁর কপালে কাদামাটি লেগেছিল, তিনি বের হয়েছেন তিনি বলবেন যে কোন রাতটা লাইলাতুল কদর এর রাত এটা বলতেই তিনি বের হয়েছিলেন দিয়ে দেখছেন যে দুজন মুসলিম লোক নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে আর এই দেখেই আল্লাহ নবী (সাঃ) এর হৃদয় থেকে তুলেনিলেন।তিনি আর বললেন না যে exactly কোন রাতে কদর ছিল। তিনি বলতেই বেরিয়েছিলেন কিন্তু আমাদের একটি ভুলের কারনে আমারা জানতেই পারলাম না কোন রাত কদরের রাত। তবে এর মধ্যেই কল্যাণ আছে,একটা প্রবাদ আছে যে কোন খারাপ এর পেছনে ভাল আছে।নির্দিষ্ট করে বলে দিলে তাহলে আমাদের বাকি রাত গুলো জাগতে হতো না।তিনি তখন বললেন আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আপনাদের ঝগড়ার কারণে অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজড় রাত গুলো তালাস করো।শেষ দশকের বিজড় রাত বলতে ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ এই রাতের যেকোন একটা রাত লাইলাতুল কদর।
এবার প্রশ্ন আসতেই পারে এই রাতে ইবাদত করলে এত নেকি হচ্ছে কারণ কি?রাত আর দিন কি আলাদা কিছু? প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ পাক প্রথম আসমান এ নেমে আসেন। প্রত্যেক রাতেই শুধুমাত্র সবেবরাত এ নয়।আল্লাহ পাক নেমে আসেন এসে তিনটে কথা বলেন,রাতের শেষ অংশে বলেন তিনি
“কে আছো আমার কাছে যা চাইবে আমি তাই দেব”
“কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তোমাকে মাফ করে দেব”
“কে আছো আমাকে ডাকবে আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব”।
এই সময় যদি আমরা কিছু চাই যদি আমাদের রিজিক হালাল থাকে তবে আমাদের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন। আল্লাহ প্রত্যেক রাতেই আসমানে নেমে আসেন। তাও কেন লাইলাতুল কদর কে এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কি? লাইলাতুল কদর কে মর্যাদা মন্ডিত করার এবং রমজান মাসকে মর্যাদা মন্ডিত করার একটাই কারণ যেটা হচ্ছে এই মাসে এবং এই রাতেই আমাদের আল কুরআন নাযিল হয়েছিল। কোরআন নাজিলের কারণে এই মাসটা মহামান্বিত। কোরান নাজিলের কারণে ই এই মাসটা সম্মানিত।
কেন এই মাসে এই রাতে আল্লাহপাক কোরআন নাজিল করেছিলেন। কারণ এই সমাজটাকে পরিবর্তন করার জন্য সমাজে জাহিলগুলোকে দূর করার জন্য।নবী(সাঃ) সব সময়ই ফিকির করতেন কি করলে মানুষগুলো সিরিক ছেড়ে দেবে, সুদ বন্ধ হবে, কি করলে মানুষ মাদক থেকে দূরত্বে থাকবে,কি করলে নারীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে,তিনি ভাবতেন ,কি করলে গত্রিয় হানাহানি বন্ধ করা যায়। তিনি এইসব ভাবতেন হেরা গুহায় বসে। তিনি এগুলো ভাবতেন, এইসব ভাবতে ভাবতে একদিন এক রাতে আল্লাহর তরফ থেকে তাঁর কাছে কোরআন নাজিল হলো।
এর জন্যই আমাদের এই রমজান মাস ও লাইলাতুল কদর কে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়।
One Response
Alhamdulillah ❤️