একটি অন্ধ প্রেম কাহিনী

একটি অন্ধ প্রেম কাহিনী

Written By Asmina Khatun

The eyes have it বাংলা সংস্করণ | Ruskin Bond

লেখক যাচ্ছিলেন দেরাদুন থেকে মুসৌরি। লেখক এর ট্রেন এসে থামলো রোহানা নামক স্টেশনে। সেই স্টেশন থেকে উঠলো এক রমণী। তাঁকে ট্রেনে see off করতে এসেছিলেন সেই রমণী বাবা মা। রমণীর বাবা মা তাকে বললেন যে ট্রেনে কোনরকম অজানা অচেনা মানুষের সাথে বেশি কথাবার্তা বা মেলামেশা করবে না। এই বলে সেই রমণীর বাবা-মা তাকে বিদায় জানিয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর চলে গেলেন।


লেখক দুচোখেই দেখতে পান না। কিন্তু তিনি আলো এবং অন্ধকার বুঝতে পারতেন। রমণীটা যখন ট্রেনের কামড়ায় ঢুকছিল সে যে চপ্পল পড়েছিল সেটা লেখক বুঝতে পেরেছিলেন। কারণ চপ্পলটি তার গোড়ালিতে আঘাত হান ছিল সেই আওয়াজ পেয়েই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে রমণীটি চপ্পল পড়ে আছেন। তারপর রমণীকে লেখক জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনি কি দেহরা যাবেন?


মেয়েটি একটু চমকে উঠে বললেন যে আমি বুঝতে পারিনি এখানে কেউ আছেন বলে, তখন লেখক ভাবলেন যে তিনি হয়তো একটু অন্ধকারের দিকে বসে আছেন। তাই রমণীটি বুঝতে পারেনি যে তিনি সেখানে আছেন বলে। হ্যাঁ, প্রায় এমনটাই ঘটে। ভালো দৃষ্টি শক্তি থাকা সত্ত্বেও মানুষ দেখতে পাইনা যে কোথায় কি আছে। লেখক চোখে দেখতে পান না বলে ভাবেন যে যারা সব মানুষ চোখে দেখতে পায় তারা হয়তো সবকিছুই দেখতে পায়। আর যেসব মানুষ চোখে দেখতে পাইনা তারা শুধু অত্যাবশ্যটুকুই গ্রাহ্য করে, যেটুকু তাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করে। লেখক সেই রমণীকে বুঝতে দেননি যে তিনিও অন্ধ। তারপর রমণীটি বলল যে সে সাহারানপুরে নামবে তাকে আনতে আসবে তার পিসি। রমণীটি লেখক কে জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনি কোথায় যাবেন?
লেখক উত্তর দিলেন যে তিনি দেহরা হয়ে মুসৌরি যাবেন। রমণীটি তখন বলল যে আপনার কি ভাগ্য আপনি মুসৌরি যাচ্ছেন। আমি খুব পাহাড় ভালবাসি। বিশেষ করে অক্টোবর মাসে।


লেখক তখন মুসৌরির বর্ণনা দিলেন, অক্টোবর মাসে পাহাড় বুনো ডালিয়া ফুলে ঢেকে যায়, সূর্যটা খুব আকর্ষণীয় হয়,আর রাতের বেলা সবাই কাঠে আগুন জ্বালিয়ে ব্র্যান্ডি পান করে।রমণীটা চুপ করেই রইল।তারপর লেখক একটা ভুল করে বসলেন,তিনি বলে বসলেন যে বাইরেটা কেমন দেখাচ্ছে? তখন তিনি ভাবলেন যে রমনী বুঝে গেছে যে আমি অন্ধ। কিন্তু তারপরে লেখক বুঝতে পারলেন যে রমণী বুঝতে পারেনি যে তিনি অন্ধ বলে। কারণ তারপর মেয়েটি বলল যে আপনি কি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন না বাইরেটা কেমন, তখন লেখক ইঞ্জিনের হাঁপানি চাকার ঘর ঘর শব্দ তারপর তিনি মনের চোখ দিয়ে দেখতে পেলেন যে টেলিগ্রাফ এর খুটি গুল দ্রুত ছুটছে আর গাছগুলো ছুটছে কিন্তু তাঁরা স্থির হয়ে আছেন। তারপর রমণীটি লেখক কে জিজ্ঞাসা করলেন যে কোন প্রাণী দেখতে পাচ্ছেন? তখন লেখক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন যে না কোন প্রাণী নেই কারণ তিনি জানতেন যে দেহরার পাশের জঙ্গলে প্রায় কোন প্রাণী থাকে না। তারপর তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো। কিছুক্ষণ পরে লেখক রমণীকে মন্তব্য করে বললেন যে আপনার মুখটা খুব সুন্দর। রমণীটি মিষ্টি হাসলো, হাসিটা ছিল স্পষ্ট সশব্দ হাসি। রমণী টি তখন বলল সবাই শুধু বলে তোমার মুখটা খুব সুন্দর। এই সুন্দর শব্দটা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

তারপর রমণীর লেখককে বলে যে আপনি এত গম্ভীর কেন? তখন লেখক ভাবলেন যে না হয় আমি সেই রমণীটিকে একটু খুশি করার জন্য হাসার চেষ্টা করি। তাদের এইসব কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনের শব্দ তাদের গল্পের ছন্দ পরিবর্তন করল। রমণী তার জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করল, তখন লেখক ভাবছিলেন যে রমনীর চুলে কি খোপা করা আছে, নাকি বিনুনি করা আছে,নাকি চুল কেটে ছোট করে মেলে ফেলে রেখেছে।

ট্রেন ধীরে ধীরে সাহারানপুর স্টেশনে এসে পৌঁছালো,বাইরে কুলি আর দরজার কাছে চিৎকার করে চমনীটির পিসি তাকে ডাকছে, রমনীতি লেখক কে “বিদায়”জানালো। রমণী লেখকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চুলের সুগন্ধ লেখক কে মুগ্ধ করেছিল। লেখক হাত তুলে তার চুলটাকে ছুতে যেতে তখন,সেই রমণী চলে গেছে। রমণী যে জায়গায় দাঁড়িয়েছিল সেখানে শুধু সুবাস আর সুবাস। তারপর ট্রেনের গতি বাড়ালো চাকার গান শুরু হলো কামরাগুলি ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। তারপর লেখক জানালার বাইরে আলোর দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু সেই আলো তার কাছে অন্ধকার। কারণ তিনি চোখে দেখতে পান না। তখন সেই লোকটি যে সেই কামরায় উঠেছিল সাহারানপুর স্টেশন থেকে, সে লেখকের দিবা স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটালো।

সে লেখক কে বলল যে তুমি নিশ্চয়ই হতাশ হবে, কারণ আমি তোমার সেই সফর সঙ্গীর মতো অতটা আকর্ষণীয় নয়। তখন লেখক সেই লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে মেয়েটির চুল লম্বা ছিল নাকি ছোট করে কাটা ছিল? তখন লোকটি বলল কেন আপনি দেখেননি? তার উত্তরে লেখক বললেন না আমি খেয়াল করিনি। আমি তার চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। কারণ তার চোখ গুলো খুবই সুন্দর। তখন লোকটি বলল সত্যি খুব সুন্দর। কিন্তু সেই চোখ তার কাজে লাগে না আপনি দেখেননি;তখন লেখক বুঝতে পারেন যে আসলে মেয়েটি অন্ধ ছিল তারই মতন।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: