গ্রামীণ অতুলনীয় রুপ |গগনলালাট চুমে তব পদধূলি, ছায়া শুনিবির শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।

গ্রামীণ অতুলনীয় রুপ |গগনলালাট চুমে তব পদধূলি, ছায়া শুনিবির শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।

Written By Taniya Parvin

“গগনলালাট চুমে তব পদধূলি
ছায়া শুনিবির শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি। ”

জানেন ?আমাদের দেশ এই ছোট ছোট গ্রামগুলির জন্যই অনেক সুন্দর । গ্রামের আলোতে আমরা দুচোখ মেলেছি। বুক ভরে নিয়েছি দূষণমুক্ত বাতাস। মাঠে চাষের শস্যকণা ,বাগানের ফলমূল মিটিয়েছে ক্ষুধার চাহিদা আর দেহের পুষ্টি । এখানকার মাঠঘাট, গাছ-গাছালি, জীবজন্তু ,নদী-নালা, পুকুর ও মানুষজনের সঙ্গে ঘটেছে হৃদয়ের গভীর যোগ। চারিদিকে আম ,জাম ,কাঁঠাল ,নারিকেল ,সুপারির বনবিথী এ যেন আবহমান গ্রাম বাংলার একটি ছায়া ঢাকা শান্তির নীড়।


গ্রাম আমাদের ‘শিশু সজ্জা, যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী । যা শহরে বা বিদেশে পাবেন না।
বাংলার গ্রাম গুলোর এমনই রূপ । এই গ্রামগুলি হল আমাদের দেশের প্রাণ বিন্দু। ছায়া শীতল শান্ত পরিবেশে গ্রামগুলির অবস্থান। হয় মাঠের প্রান্ত ছুঁয়ে কতগুলি বাড়ির ঘরের জটলা অথবা জনপদের পা ছুঁয়ে দিগন্ত বিস্তৃত অবারিত সবুজ চাষের জমি ।
অনেক অনেক গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা নদী । ছোট ছোট পুকুর কোথাও পায়ে হাঁটা সরু পথের দুধারে বাঁশের ঝড় । কোথাও আবার ঝুড়ি নামিয়ে গ্রামের সমস্ত ইতিহাসের সাক্ষী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন বটগাছ। ঘন ছায়াতে আম কাঁঠালের বাগান যেন রাখালের খেলাঘর ।
মুক্ত বাতাসে মনের আনন্দে পাখিদের ডাক কোকিল ডাকে ,পঞ্চমে চাতকের কাতর ধ্বনি, ঘুঘুর ক্লান্তসর গ্রাম্য প্রকৃতির রূপকে দেয় এক নতুন বাহার ।
এক এক ঋতুতে এক এক রূপ । আহা কি মনোমুগ্ধকর ঋতু পরিবর্তন এর সাথে সাথে নতুন সাজে সজ্জিত হয় বাংলার গ্রামগুলি।
গ্রীষ্মের ঘরোতাপে পুকুর খাল নদী নালা শুকিয়ে যায় । দূর দূরান্ত পর্যন্ত শস্য শুন্য চাষের জমি । চারিদিকে শুষ্ক রুক্ষ ভাব । জনমানব শূন্য মাটির রাস্তা আর ঘুঘুর মন উদাস করা ডাক বাংলার গ্রামের এক পরিচিত চিত্র ।
বর্ষার আবির্ভাবে আকাশের ভেসে বেড়ায় সজল মেঘমালা। এক নতুন জীবনে সবুজ সাজে সেজে ওঠে বাংলার প্রকৃতি ।


“অরুন আলোর অঞ্জলি” নিয়ে হাজির হয় শরৎ।
হেমন্তে শিশির আর হিমের পরশে মাঠের মঞ্জুরিত শস্যে ধরে সোনার রং ।
শীতের কুয়াশা ঢাকা সকাল আর উত্তরে হিমেল হওয়ার জরতার ভাব ।
“ফাগুনের আলোর সোনার কাঠিতে “বাংলার গ্রামের সকাল হয় । গাছের পাতা ঝরে আবার নতুন পাতায় ফুলেফলে ডাল গুলি নতুনভাবে সেজে ওঠে
‌ নির্জন দুপুর! স্তব্ধ সময়ের এই বিশেষ ক্ষণে মানুষ নিজের মধ্যে এক ধরনের আড়ষ্ঠতা খুঁজে পায়।মানুষের জীবনে নেমে আসে মন্থরতা । অফিস- আদালত ব্যস্ততার স্থান হলেও এ সময় মানুষ শান্তিতে শরীরে মন্থরতা ও আবিষ্কার করে। গ্রামের ফসলের জমিতে কৃষকের কোন কাজ নেই ; অলস এখানে তার দু চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে । আগুনের হলকার মতো সূর্যের তাপ শরীর স্পর্শ করে কাজ ফেলে গাছের নিচে তখন অবস্থান ন্যায় কৃষক। মর্ধানের এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কবি বলেন –“রৌদ্রময়ী রাতি /ঝাঁঝা করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঝুম “
মধ্যাহ্নে পাল্পিপ্রকৃতিতে মানুষের মধ্যে আনন্দময় কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। মনের ভালোলাগার বোধ কাটে। আর ঝড়ের আভাস পেলে হাজির হয় আম গাছের নিচে ।


শহরে অবশ্য এরকম চিত্র দেখা যায় না। কর্মময় ব্যস্ত শহরে দুপুর যেন একরকম উপেক্ষিত। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অভিজাত্য তাদের এরকম দুপুর উপভোগের বেশি সুযোগ দেওয়া হয় না । বাস্তবিক কোন সিক্ততা । কিন্তু ওইরকম দুপুরে প্রকৃতিও বিমুখ হয় মানুষের মানসিক চাহিদার কাছে । তাই চারিদিকে শূন্যতা হাহাকার রূঢ়তা যেন মানুষের মনকে গ্রাস করে ফেলে ।
গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নের এই ক্ষণও প্রকৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় না । একসময় সূর্য ঢলে পড়ে শান্ত হয়ে আসে।
গোধূলি লগ্ন থেকে পাখির ঘরে ফেরা শুরু হয়। সূর্যতাপ্রোহিত প্রকৃতি একটু হলেও ঠান্ডা হয়ে আসে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা শেষে রাত নামে প্রকৃতিতে।
তবে দীর্ঘ মধ্যাহ্ন প্রকৃতির বুকে যে স্মৃতি এঁকে দেয় তা মানুষের মধ্যেও স্থায়ী কল্পনার উৎসরণ করে। অলস মানুষ বিশ্রামে পার করে গীষ্মের এরকম প্রতিটি মুহূর্ত তার কল্পনার শক্তিতে শিল্পী গড়ে তোলার অপূর্ব নির্মাণ সৌধ।
‌ঝিরিঝিরি বাতাস, নির্জন রাত! গ্রামের পথেঘাটে কোথাও প্রাণের আভাস মাত্র নেই । বৌদ্ধ পূর্ণিমার রাত । চাঁদ যেন তার অপূর্ব শুভ্র আলো ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে । সমস্ত নিঃসর্গ যেন জ্যোৎস্নার শুভ্রতায় আন্দোলীন হয়ে গেছে । চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় প্রকৃতির এই শোভা দেখে আপনি অভিভুত হবেন ।


মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কলি -“আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বলে বসন্তেরই মাতাল সমীকরণে”
বনের ভেতর দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্নার প্রকৃতি অনুভব করা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা ।
“আয় আয় চাঁদ মামা” বলে ছোটবেলা থেকে আমাদের সঙ্গে চাঁদের নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়। চাঁদ যেন জীবনে স্নিগ্ধতার আলো ছড়ায়। কবি সাহিত্যিকরা চাঁদকে নিয়ে লিখেছেন স্মরণীয় কত কবিতার পঙ্গতি। এভাবে চাঁদ আর জ্যোৎস্না মানব জীবনে অমলিন হয়ে আছে। জ্যোৎস্না রাতে প্রকৃতিকে খুব মায়াবী দেখায় চারিদিক জ্যোৎস্না আর শুভ্রতা। নদী তীরে দিগন্ত জোড়া প্রান্তরে দাঁড়ালে যে কোন মানুষের মনে স্নিগ্ধতার বোধ জন্মে । আনন্দে ভরে যায় সারা মন ।


চন্দ্রলোখিত রাতের অপরূপ শোভা দেখা যায় ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা।
দীর্ঘদিনের অবহেলা আর বঞ্চনাকে কাটিয়ে অনেক গ্রামেই উন্নত হয়ে উঠেছে। আগের মতো গ্রামগুলিতে আর বিদ্যুৎ ,শিক্ষা ,পথঘাট ,যানবাহনের অভাব নেই । শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে গ্রামগুলি উন্নত হয়েছে । তবুও এখনো বাংলার গ্রামগুলিতে আছে সরলতা ,শান্তি বুক ভরে টেনে নেওয়ার মতো প্রাণদো বাতাস । আর চোখ ভরে দেখার মতো সজল শ্যামলতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share:

RECENT POSTS