হিরণ্য নামক এক দেশে এক গরিব মানুষ বাস করত। তার পরিবার ছিল সে আর তার স্ত্রী। তাদের কোন সন্তান ছিল না কেবলমাত্র তারা দুজনেই ছিল, তাদের পরিবার সুখে শান্তিতেই দিন কাটতো। তারা সচ্ছলভাবেই জীবন যাপন করত প্রতিদিন কাজ করতো আর সেই টাকায় তাদের আরামসে দিন চলত। কিন্তু কথাতেই আছে মেয়ে মানেই লোভী, হঠাৎ একদিন সেই লোকটার স্ত্রী এক নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাই, সেখানে গিয়ে দেখে সেই নিমন্ত্রণ বাড়িটায় এলাহি ব্যাপার, সেই নিমন্ত্রণ বাড়িতে ছিল সেই বাড়ি মালকিন এর জন্মদিন।
গরিব লোকটির স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখে যে নানা ধরনের খাবার, নানা ধরনের মানুষ তাদের পোশাক-আশাক কত দামি দামি, আর যারা সব নিমন্ত্রণ বাড়িতে আসছে তারা সব চারচাকা গাড়ি করে নামছে। সেই দেখে সে ভাবে যে আমরাও যদি এরকম বড়লোক হতাম আমাদেরও গাড়ি থাকতো, বাড়ি থাকতো, আমারও জন্মদিন পালন হতো। সেই থেকে তার লোভ জন্ম নেয়।
নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে ফিরে সে তার নিজের বাড়িতে গিয়ে তার স্বামীর সাথে গল্প করতে লাগল। দিয়ে বলল জানো যেই নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়েছিলাম তারা কত বড়লোক, কত খাবার,পোশাক কত দামি দামি আর কেকটা হয়েছিল যেন এক বাড়ির সমান। আমরাও যদি এরকম বড়লোক হতাম আমরাও এরকম করতাম তাই না, এই বলে সে তার স্বামীকে বলল যে এবার থেকে আমারও এরকম করে জন্মদিন করতে হবে তোমাকে। তখন স্বামী বলল আমরা খেটে খাওয়া মানুষ,একদিন খেতে পাই একদিন খেতে পায় না। কিন্তু জন্মদিন কিভাবে পালন করব। তখন সেই লোকটার স্ত্রী বলল আমি এসব কিছু শুনতে চাই না তুমি কেন গরিব হয়েছ তুমি কেন ইনকাম করতে পারো না।যদি তুমি আমাকে দামি দামি জিনিস,দামি দামি খাবার, দামি দামি জামাকাপড় না কিনে দিয়েছো তাহলে আমি আর তোমার সাথে থাকব না।এই বলে গরিব লোকটির স্ত্রী সেখান থেকে চলে গেল।এই সব কথা শুনে লোকটি কি করবে তা ভেবে পাচ্ছে না।
সে মনে মনে ভাবচ্ছে যে যদি আমি ইনকাম করে বড়লোক না হতে পারে তাহলে আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, এখন আমি কি করবো। তারপর সে ভাবলো যে তাকে বড়লোক হতে হবে ইনকাম করতে হবে। সেই গরিব লোকটি ইনকামের জন্য কাজ খুঁজতে লাগলো তেমন ভালো কোন কাজ পেল না তখন,সে রিক্সা চালাতে লাগলো রিক্সা চালিয়েও তত ইনকাম হয় না। তখন সে ভাবলো কি করব উপায় কি? তারপর সে সারাদিন ঘরে ফিরল না।
কাজের খোঁজে ঘুরতে লাগলো অবশেষে একটা সে ভালো কাজ পেল ,সে কঠোর পরিশ্রম করে হয়ে উঠল ধনী মানুষ। তখন তারা খুব বিলাসিতা জীবন যাপন করতে লাগলো, তাদের ধনী বিলাসিতা জীবনে আসলো অন্ধকার আলো। হঠাৎ একদিন গরিব লোকটির স্ত্রী অসুখে পরল । কিন্তু এখন তাদের প্রচুর টাকা কিন্তু ভগবান তাকে এমনই রোগ দিয়েছে যে টাকাতেও সে সেরে উঠবে না। তখন সে তার স্বামীকে বলল যে আমাদের এত টাকা আছে তুমি তাও পারছ না ভালো ডাক্তার দেখিয়ে আমাকে ভালো করতে; তখন তার স্বামী উত্তরে বলল তোমার এমনই রোগ হয়েছে যে ডাক্তার ও কিছু করতে পারবে না। তখন তার স্বামী তাকে বলল যে আমাদের দিন এনে দিন খাওয়াটাই ঠিক ছিল।
এখন টাকা থেকেও আমরা সুখ পাচ্ছি না বরং বেশি অসুখে পড়ে যাচ্ছি। তুমি বলছিলে না দামি দামি শাড়ি পড়বে গয়না পড়বে দামি দামি খাবার খাবে, আজ দেখো তোমাকে এসব খেতেও হচ্ছে না তুমি খেতে পারছো না কারণ, এমনি ভগবান অসুখ দিয়েছে যে তোমার উঠে দাঁড়ানোর মতন ক্ষমতা নেই। এবার বল তাহলে টাকা থেকে কি হবে! যদি সুখটাই না থাকে। তখন তার স্ত্রী সেই গরিবি আনাটাকে অনুভব করতে পারল। যে সত্যি আমরা খুবই সুখে ছিলাম। যখন আমাদের টাকা ছিল না আমরা রোজ রোজ ইনকাম করে যখন খেতে পেতাম। যখন টাকা হয়েছে তখন আমাদের বেশিদিন টাকাকে ভোগ করতে হলো না। তাই বড়লোক হওয়াটাই বৃথা!
তাহলে আমরা এই গল্পটা শুনে বুঝতে পারি যে টাকা মানুষকে সবসময় সব সুখ দিতে পারে না ক্ষণিকের জন্য সবই হয়। টাকা মানুষকে হয়তো দামী দামী শাড়ি পড়াতে পারে গয়না পরাতে পারে খাবার খাওয়াতে পারে কিন্তু ভগবান যদি না চায় তাহলে টাকা থেকেও মানুষ জীবন ভিক্ষা পায় না।