রহস্যময় দেহ – পর্ব ১

রহস্যময় দেহ - পর্ব ১

Written By Amrita Kotal

কোথায় চলে গেলি আমাদের ছেড়ে ?কেন এরকম করলি বাবু? আমাদের কথা তোর একবারও মনে পড়ল না? এবার আমি কি করবো কি নিয়ে বাঁচবো আমাদের কেন নিয়ে গেলি না এ ঠাকুর আমাকে তুলে নাও আমি আর বাঁচতে চাই না আমি যে সর্বহারা হয়ে গেলাম , কোথায় গেলি আমার সোনা ছেলে তোর মায়ের কোলে ফিরে আয় বাবা.. কি কষ্ট ছিল তোর মনে আমাকে সব বলতে পারতিস তো বাবা, ফিরে আয় আরেকটি বার বাবু ফিরে আয়…. আমি যে আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না এই শোক আর সহ্য করতে পাচ্ছি না.. কি করলি তুই এটা একবারও তোর বাবা মায়ের মুখটা মনে পরল না। কি করলি এটা তুই… বেঁচে থেকেও মৃত্যুর যন্ত্রণা দিয়ে গেলি বাবা, শুধু ফিরে আয় তুই আর একবার শুধু ফিরে আয়, ফিরে আয় একটি বার বাবু….”


……… নিজের ছেলের মৃতদেহের সামনে শোকারতো মায়ের আর্তনাদ পুরো গ্রামটিকে ছেয়ে ফেলেছে, আর ছেলেটির বাবা পাথর হয়ে দেহটির এক পাশে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে তার ছেলের মুখের দিকে…
এক এক করে বেশ ভালই লোকের জমায়েত হয়েছে তারাও কৌতূহল হয়েছে রয়েছে ,তারাও বোধহয় মেনে নিতে পারেননি প্রানবন্ত ছেলেটির মর্মান্তিক অকাল মৃত্যু!.. এতক্ষণে এসে পড়েছে পুলিশ, দূর থেকে পুলিশের গাড়ির সাইরেন্ শোনা যাচ্ছে. , আর এসে দাঁড়িয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স, সবাই নিশ্চুপ, কৌতুহল; ততক্ষণে সিলিং ফ্যান থেকে নামানো হয়ে গেছে দেহটি, ছেলেটির নিথর দেহটি নামিয়ে একপাশে শুয়ে সাদা চাদর জড়িয়ে চেয়ে থাকা চোখ হস্তস্পর্শ করে বুজিয়ে তুলসী পাতা ও ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে,.. পাশে কয়েকটি চন্দনের ধুপ চলছে আর রজনীগন্ধা স্টিক ও গোলাপ ফুলে সাজানো হচ্ছে সববাহি গাড়িটিকে ; ছেলেটির অত্যন্ত প্রিয় যে গোলাপ……
কেউ হয়তো মেনে নিতে পারছে না যে ছেলেটিকে কালই হেসে খেলে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম, সেই আজ আর এই পৃথিবীতে নেই..!

সোনারপুর গ্রামের চাষী পরিবারের ছেলে অগ্নিদীপ সামন্ত , বরাবরই অত্যন্ত মেধাবী, হাসিখুশি ,মিশুকে ছেলে অগ্নিদীপ, .. গ্রামের সবাই তাকে দীপ বলে ডাকত, গ্রামের সবাই দীপ বলতে অজ্ঞান ,এমনকি একদিন স্কুল কামাই করলে স্যারেরা তার বাড়ি এসে খোঁজ নিয়ে যেত, গ্রামের বাচ্চা থেকে বুড়ো দীপ এর কাছে নানা আবদার করত আর সে হাসিমুখে সব আবদার রাখতো, তাই তার চলে যাওয়াতে গ্রামের মানুষদের মুখে একটাই কথা “কাকে এবার বলবো আমার ওষুধটা এনে দে তো বাবা “…আবার কারোর মুখে ” কে এবার ব্যাট ধরবে ,লজেন্স দেবে” ইত্যাদি…

ছোট্ট সোনারপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে অগ্নিদীপ, বাবা অনল সামন্ত ও মা দিপালী দেবী, তিনজনের একটি ছোট্ট পরিবার,.. নিজেদের কাঠা তিনেক জমিতে ও লোকের জমিতে ভাগ চাষী হিসেবে চাষ করেন অনল বাবু , ছোটবেলা থেকেই দীপ মেধাবী হওয়ায় তাকে মানুষের মত মানুষ করে সুপ্রতিষ্ঠিত করার যে জেদ চেপে যায় অনল বাবু এবং দিপালী দেবীর মনে। তখন থেকেই তারা আসা বুনতে শুরু করেন যে তাদের ছেলে হয়তো একদিন তাদের এই দারিদ্রতা দূর করবে…. দিপালী দেবী অনল বাবুকে সাহায্য করার পাশাপাশি নিজে সেলাইয়ের কাজ করতেন। দিনরাত পরিশ্রম করতেন নিজেদের শখ সাধ ভুলে, দীপ যখন সবে ক্লাস টু তখনই সে ক্লাস ফোরের অংক সমাধান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিত… নানা রকম বই পড়া ও লেখায় ছিল তার একমাত্র নেশা, অবশ্য তার পাশাপাশি সে ক্রিকেট ও দাবা খেলতেও বড় ভালোবাসতো,… ক্লাস নাইনে কলকাতার একটি দাবা প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সে, তাই তার বুদ্ধিমত্তার কথা গ্রামের লোক তো বটেই তার বাইরেও অনেক লোক জানতো তার কথা,….. আর জানবে নাইবা কেন ! নিজের সর্বস্বটুকু দিয়ে মানুষের দুঃখে,বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ত অগ্নিদীপ,…

তখন অগ্নিদীপ এর বয়স সবে ১৪ বছর, গ্রামের একটি বাড়িতে কিছু কারণবশত আগুন লেগে গিয়েছিল ,বাড়িটির ভেতর থেকে মা-বাবা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারলেও ,তাদের একটি ছোট্ট মেয়ে ভেতরে রয়ে যায়.. সেই সময়ে দীপ ওই রাস্তা দিয়েই টিউশন থেকে ফিরছিল,…দীপ কিছু না ভেবেই দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে ও প্রাণে বেঁচে যায় বাচ্চা মেয়েটি,…. এভাবেই তার দৌরাত্ম ও সাহসিকতার পরিচয় রেখে যায় অগ্নিদীপ….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: