ফেলে আসা স্কুলের অমূল্য সময়

ফেলে আসা স্কুলের অমূল্য সময়

Written By Taniya Parvin

আজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিন ।
পরীক্ষা দিয়ে Examhall থেকে বাইরে বার হয়ে আসলাম আমরা সবাই ।
খুব খুশি খুশি লাগছিল ভাবতে যে, স্কুল জীবন শেষ এবার কলেজ জীবন শুরু। আর সেই একই সময় হাজিরা দিতে হবে না। স্কুলে 5 ঘন্টা একইভাবে বসে ক্লাস করতে হবে না। পড়ার অত চাপও থাকবে না ।
ভেবে বন্ধুদের কাছে গেলাম …….
“কিরে! সব একই কলেজে যাব তো আমরা ?
সবাই একসাথে যাব বিশাল মজা হবে নারে! “
“সুফিয়া ,কাজল, সেরিফা এদের তো বিয়ে ঠিক হয়ে করে দিয়েছে……. এদেরতো বিয়ে হয়ে যাবে !”
কথাটা শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো।


“তাতে কি ?বাকিরাতো একসাথে যাব ??”
মুডটা অন্যদিকে ঘুরাতে বললাম।
“একদম “সবাই একসাথে বলে উঠলো।
উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরানোর পর সবাই এডমিশন নিতে শুরু করল……
সবাই এর আলাদা আলাদা কলেজে এডমিশন লাগে। সবাই আমরা আলাদা আলাদা হয়ে পড়ি ।
” কলেজে একসাথে নইতো কি হয়েছে ?আমরা সব সময় একই থাকবো …..রোজ ফোনে কথা হবে । “
সবাই এই একই সিদ্ধান্তে আসলাম আমরা ।
সময় যেতে লাগে……..
নতুন কলেজে বেশ ভালই লাগছিল । নতুন কয়েকটা বন্ধুও হল । তাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
আগে রোজ দিনে একবার হলেও সেই পুরনো বন্ধুর সঙ্গে কথা হতোই। তারপর সেটা কমে 3 দিনে একবার, তারপর কমে এক সপ্তাহে একবার হতো ।
আর এখন হয়তো মাসও একবার সে বন্ধুদের সাথে কথা হয় না।
whatsapp গ্রুপে 12 জন থেকে কমে 5 জনে এসে দাঁড়ালো ।
আমারও আর পুরনো বন্ধুদের দিকে নজর দেয়া হলো না ।
নতুন করে বন্ধু পেয়ে পুরনো কিছু আর মনে এলো না।


এখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ চলছে আমার……

অনেকদিন পর আজকে পুরনো স্কুলের সামনে দিয়ে যাবার সময় সেই অতি পরিচিত শ্রেণীকক্ষের দিকে নজর গেল।
ভেতরে হয়তো স্যার নেই…….ছাত্রীরা গোল হয়ে বসে একসাথে গল্প করছে।
হঠাৎই এক মেয়ে ওঠে অন্য একটি মেয়ের দিকে ছুটল……….আর সামনের সেই মেয়েটি হাসতে হাসতে আরো কিছু একটা বলে পেছনে ছুটতে থাকা মেয়েটিকে আরো রাগিয়ে দিতে শুরু করলো ।

এসব দেখে অজান্তে হেসে ফেললাম …….
হঠাৎ বুকের কোথাও একটা চিনচিন করে ব্যথা হতে লাগলো !!!!
সেই দুটো মেয়ের মধ্যে যেন নিজের এবং আমার পুরনো সেই বন্ধুদের মুখগুলো ভেসে আসলো ।
হ্যাঁ, ঠিক এমনই তো ছিলাম আমরা।
ক্লাসের সব থেকে দুষ্টু মেয়ের খেতাব ছিল আমার কাছে।।
সবাই একই ক্লাসে পড়লেও বয়সে সবথেকে ছোট হওয়ায় ছাড়টা সবসময়ই পেয়ে যেতাম ।
পুরনো সবকিছু যেন একটা একটা করে চোখের সামনে একটা একটা করে ভেসে আসতে শুরু করল ।
প্রথম বেঞ্চে বসেও স্যারদের সাথে দুষ্টুমি করার হল গুলো…………
ক্লাস করতে ভালো না লাগলে পেছনে গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ,তারপর ধরা খেয়ে যাওয়ার পর গাল ফুলিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকাগুলো……….


ক্লাসের ছেলেদের কাছে ‘মেয়েরাই ভালো ‘এটা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝগড়া করা গুলো ………
সিআইডির মত কোথায়, কার সাথে, কার প্রেম চলছে জানার জন্য গোলটেবিলে বসে আলোচনা করা গুলো…….
কোন ছেলে মেয়ে যদি একসাথে বসে প্রেম করে তার পাশে গিয়ে কোন কারণ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকাগুলো……..
কোন একজন বন্ধু টিফিন আনলে সবাই মিলে তাকে না দিয়ে নিজেরাই টিফিনটা খেয়ে নেবার মুহূর্তগুলো…….

হঠাৎই বুঝতে পারলাম চোখ দুটো আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে উঠছে । চোখে ছোট ছোট জলবিন্দু কণা জমা হতে লেগেছে ।
চোখটা মুছে নিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে আবারো হাঁটা ধরলাম ।
সত্যিই ঠিক কথাটা পরিবর্তন চলে আসে একে একে জীবনে…….
কতটা দূরত্ব পার করে আসি আমরা ….
“জানিস আজকে কি কি হয়েছে “থেকে “না কিছু না “পর্যন্ত …….
“আরে তোদের কথাগুলো না বলে থাকতেই পারিনা” থেকে “থাক অন্য কোন সময় বলবো “পর্যন্ত……

” Send 100 sms ” থেকে “last seen ” পর্যন্ত…..সত্যিই তো কত কিছুই পাল্টে যায়।
তোমার চ্যাট লিস্টের সবার প্রথমে থাকা বেস্ট ফ্রেন্ডটিও চ্যাট লিস্টের সবার শেষে জায়গা করে নেয়।
পরিবর্তন এলেও সেই বন্ধুদের সাথে কাটানো 12 টা বছর হৃদয়ে নিজের জন্য একটা জায়গা করে রাখে ।

ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবারো নিজের গন্তব্যের দিকে যাওয়া শুরু করলাম। পেছনে ফেলে এলাম সেই সুমধুর মুহূর্তগুলো।।।।।।।

5 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: