শিবরাত্রি বা মহা শিবরাত্রি হল হিন্দু ধর্মের দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনার এক মহাত্মা দিন। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি পালন করা হয়। শিব পুরাণ অনুসারে কথিত আছে এই দিনটিতেই শিব সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের নৃত্য করেছিলেন।বছরে শিবরাত্রির সংখ্যা ১২। কিন্তু ফাল্গুনের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী বা চতুর্দশীর রাত্রিটাই সবচেয়ে পবিত্র বলে গণ্য হয়। এই তিথিতেই দেশের লক্ষ লক্ষ মহিলা শিবরাত্রি পালন করেন। পুরাণে আছে, এ দিনেই শিবকে স্বপ্নে পেয়েছিলেন পার্বতী আর এই দিনেই শিব ও পার্বতীর বিয়েও হয়েছিল। তা ছাড়া বলা হয়, উত্তর গোলার্ধের আকাশে এই দিনটিতে গ্রহ-নক্ষত্রের সংস্থান এমন হয়, যাতে মানুষ তার আধ্যাত্মিক এবং অন্যান্য শক্তি বিশেষ ভাবে জাগ্রত করে তুলতে পারে। শিব নিজে নাকি উমাকে বলেছিলেন, এই তিথি পালন করলে সমস্ত পাপের ফল থেকে নিষ্কৃতি মিলবে এবং মোক্ষলাভ হবে। অনেকের বিশ্বাস, শিবরাত্রিতে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে সত্যি সত্যিই শক্তি বাড়ে। আবার অনেক পুরাণ মতে, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে কালকূট বিষ পান করে মহাদেব সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন বলে এই দিনটিতে মহাশিবরাত্রি পালিত হয়।
তখন মহাদেব শিবলিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন এবং ব্রহ্মা ও বিষ্ণু প্রথম তাঁর পুজো করেন। সে দিন ছিল ফাল্গুনের কৃষ্ণ চতুর্দশী। আরও আছে, এই দিনেই নাকি শিবের রুদ্ররূপও প্রকাশ পায়।
বাংলায় শিবের যে রূপ, সেটি কৈলাস-অধিপতির নয়, লোকসমাজে জনপ্রিয় রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়নে যে দরিদ্র কৃষিজীবী শিবের কথা আছে, এখানে তিনিই পূজিত হন। সেখানে তাঁর স্ত্রীর নাম গৌরী। শিবরাত্রির পুজোর মন্ত্রে এই গৌরী ও শিবের কথাই আমরা পাই। অনেক বছর আগেও বাঙালি মেয়েরা নিজেদের গৌরী হিসেবেই কল্পনা করত। আর শিব যেন বাঙালির কাছে ঘরের জামাইয়ের মতো।
বর্তমান সময়ে এই শিবরাত্রি দিনটি বিবাহিত এবং অবিবাহিত মহিলারাই উৎসাহের সঙ্গে পালন করেন। লোকো কথায় বলা হয় যে অবিবাহিত মেয়েরা যদি শিবরাত্রি পালন করে তাহলে তারা দেবাদিদেব মহাদেবের মতন স্বামী পাবে। এই শিবরাত্রি পালন করার জন্য শিবরাত্রি দিনটির আগের দিন নিরামিষভোজন আহার করতে হয় এবং শিবরাত্রির দিন শিব লিঙ্গ এ জল ও দুধ ঢালার নির্দিষ্ট লগ্নের পূর্বে নির্জলা উপোস থাকতে হয়। প্রহরে প্রহরে শিবলিঙ্গে জল ও দুধ এবং আকুন্দ ফুলের মালা নিবেদন করতে হয়। আমাদের সমাজের মহিলারা হিন্দু ধর্মের এই ব্রতটিকে বা এই দিনটিকে আনন্দ , শ্রদ্ধা সহকারে পালন করেন।
মহা শিবরাত্রি হল হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান উৎসব, যা মহাদেব শিবের আদিদেবতা ও সৃষ্টিশীল গুণের অনুষ্ঠান করে। এই উৎসবটি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তারিখে পালন করা হয়। এই দিনে হিন্দু বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভক্তরা শিব মন্দিরে যাত্রা করে এবং শিবলিংগে জল ও দুধ অর্পণ করে তার আদর্শ প্রতীকগুলি।
মহা শিবরাত্রির ইতিহাসের সুযোগ হিসেবে শিবের বিবিধ মহিমা এবং গুণগুলির অনুষ্ঠান করা হয়। পুরানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই দিনে শিব ও পার্বতীর বিয়ে এবং এই দিনে শিব নিজেকে রুদ্ররূপে প্রকাশ করেছিলেন। অন্য পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে যে এই দিনে শিব ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা করেছিলেন, যেখানে শিব তার মহিমার অমিত গুণগুলি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে মহা শিবরাত্রির উল্লেখ প্রথমবারের মধ্যেই উল্লেখিত হয়েছিল। রাজমহলে শিবরাত্রি উৎসবের পালন করা হতো খুব প্রাচীন কাল থেকেই। এই উৎসবটির অংশ হিসেবে শিবের পূজা, জল ও দুধের অর্পণ এবং ধার্মিক উপলক্ষে বিভিন্ন আযাতন সম্পন্ন হতো।
মহা শিবরাত্রি উৎসবের দিনে অনেক মানুষ শিবলিংগে জল ও দুধ অর্পণ করে এবং তারা গান, নৃত্য, ধ্যান এবং প্রার্থনা করে তাদের শিবের অনুরাগে মত্ত হয়ে উঠে। এই দিনে অনেক শিব মন্দির পুজারিরা রাতের জাগরণে অংশ নেন এবং ধর্মীয় গান, কথা ও গল্প বলে সকলের উৎসাহ বাড়ানো হয়।
একদিন ঋষি নারাদ, যার আত্মপ্রকাশ অত্যন্ত গম্ভীর এবং শান্ত, ভান্ডার সম্মুখে এসে তার ভয়ঙ্কর অস্ত্রহীন স্বামি শিবের আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। শিব তাঁকে উদ্ধার করতে আসেন এবং সহযোগিতা দিয়ে ভান্ডা নিষ্ক্রিয় করে দেবেন। এই ঘটনার পর, পৃথিবীতে শিবের অদম্য শক্তি এবং করুণাময় স্বভাবের স্মৃতি থাকে।
মহা শিবরাত্রি সম্প্রতি স্বাগত করা হয় শিবের আদির নিমন্ত্রণে, সাধুদের প্রাথমিকভাবে বাসস্থান এবং ধ্যানের সময়। অনুষ্ঠানের আগে ভক্তদের প্রতিষ্ঠানের সামনে শিবের প্রতিমা স্থাপন করা হয়। এরপর শিব পূজা আরম্ভ হয় এবং ভক্তদের দ্বারা শিবের লিঙ্গে জল ও দুধ ভারবাহী করা হয়। শিবের গান, মঞ্চপাত্র, ধুন, নৃত্য, ও প্রসাদের উত্সবে অংশগ্রহণ করা হয় যাতে ভক্তদের ভগবান শিবের কাছে নিজেদের ভক্তি প্রদর্শন করা যায়।
মহা শিবরাত্রির এই অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে নিজেদের আধ্যাত্মিক জীবনে আরও পরিপূর্ণ করা যায়। এটি ভক্তদের মধ্যে শান্তি, প্রেম, এবং সহানুভূতির ভাবনা উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি শিবের উপাসনার একটি গভীর অংশ এবং এটি হিন্দুদের ধর্মপ্রচারের গভীর মূলনীতির একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ।
One Response
অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনারা লেখা দিয়ে…..
❤️❤️❤️❤️🙏🙏🙏
God bless you.