শক্তিগড়ের ল্যাংচা | শক্তিগড়ের ল্যাংচার আবিষ্কার , ল্যাংচার রসবোধ

শক্তিগড়ের ল্যাংচা | শক্তিগড়ের ল্যাংচার আবিষ্কার , ল্যাংচার রসবোধ

Written By Anushree Dasgupta

ল্যাংচার উৎপত্তি ও নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের রূপমঞ্জরী উপন্যাসে বর্ণিত কাহিনীকে প্রামাণ্য ধরে সাংবাদিক গৌতম ধনী কৃষ্ণনগর ও বর্ধমানের রাজ পরিবারের বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ল্যাংচার উৎপত্তির ইতিহাস খোঁজার করার চেষ্টা করেছেন।
সে অনেককাল আগের কথা, কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে বর্ধমান রাজকুমারের সঙ্গে। সময়ের ব্যবধানে অন্তঃসত্ত্বা হলেন রাজকুমারী আর তাই খুশির হাওয়া রাজবাড়িতে। কিন্তু তখনই হঠাৎ শুরু হয় অন্য এক বিপত্তি। কোন খাবারেই রুচি নেই রাজকন্যার। একদিন যায়, দু দিন যায়, তিন দিন যায়, রাজ বৈদ্য ও কবিরাজদের পথ্য বদল হয়, কিন্তু কোন কিছুতেই রাজকন্যার রুচি আর ফেরে না।

চিন্তা বাড়তে থাকে রাজা রানী সহ সকলেরই। হঠাৎই একদিন দেখা দিল আশার আলো। রানী মাকে রাজকন্যা একদিন বললেন, কৃষ্ণনগরে রসে ডোবানো এক ধরনের ভাজা মিষ্টি খেয়েছিল সে। আর সেই মিষ্টি মিললে মুখের অরুচি কাটতে পারে।

কি সেই মিষ্টি! কে বা তার কারিগর! কোন কিছুই জানেনা সে। তবে যে ময়দার কাছে এসে ওই মিষ্টি খেয়েছিল, সেই ময়রার একটি পা ছিল খোঁড়া, তাই স্বাভাবিকভাবেই সে একটু খুড়িয়ে হাটতো।

রাজকন্যার মুখে এই কথা শোনামাত্রই তখনই কৃষ্ণনগরের লোক পাঠালেন। আর দ্রুতই খোঁজ মিলল সেই ময়রার। খুড়িয়ে হাঁটা কে অনেকে লেংচে হাঁটাও বলতো। আর তার জন্য সবাই তাকে ডাকতো ল্যাংচা ময়রা বলে।

রাজার আদেশে সেই ময়রা তখনই রাজকন্যাকে ঘিয়ে ভাজা রসে ডোবানো কালো রঙের একটু লম্বাটে ধরনের অপূর্ব স্বাদের সেই মিষ্টি খাওয়ালো। আর সেই মিষ্টি খেয়েই রাজকন্যার এতদিনের অরুচি দূর হলো।

রাজবাড়ির সবার মুখে ফুটল হাসি। ল্যাংচা ময়রার নামেই সেই মিষ্টির নাম রাখা হল ল্যাংচা। ময়রাকে প্রচুর ভূসম্পত্তি ও উপহার দিলেন মহারাজ। সেই ময়রা বর্ধমানের শক্তিগড়ে নতুন বসতি গড়ে তুললেন। ল্যাংচা ময়রার তৈরি লাংচার সুনাম তখন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দিনে দিনে বিখ্যাত হল শক্তিগড়ের ল্যাংচা।

ছানার সঙ্গে চালগুড়ি মিশিয়ে তা নোড়ার মতো আকার দেওয়া হয়। এর পর তা তেল বা গাওয়া ঘিয়ে ভাজা হয়। তারপর ফেলা হয় চিনির রসে। পাঁচ টাকা বা দশ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়।

আগে শক্তিগড়ের ছিল এই ল্যাংচার পসার। দুনম্বর জাতীয় সড়ক তৈরির পর ব্যবসার বেশিরভাগটাই গাংপুরের কাছে আমড়া এলাকার উঠে আসে। এখানে এখন শতাধিক ল্যাংচার দোকান রয়েছে। মূলত জাতীয় সড়ক ব্যবহারকারীরাই এখানের ক্রেতা।
এই যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন এটি শক্তিগড়ের আদি ল্যাংচা ভবন থেকে তোলা। বেশিরভাগ লোকই বলে শক্তিগড়ের ল্যাংচা তার গৌরব হারিয়েছে। কিন্তু আমার তো অপূর্ব লাগলো এই ল্যাংচার স্বাদ

প্রধান উপকরণ : ময়দা, ছানা, খোয়া, চিনি
অনুরূপ খাদ্য: লেডিকেনি

ল্যাংচা এক রকমের রসের মিষ্টি। এর রঙ হয় কালচে বাদামী। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড়ের ল্যাংচা বিখ্যাত|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: