দাদুর আদরের নাতনির কাহিনী

দাদুর আদরের নাতনির কাহিনী

Written By Asmina Khatun

এক মায়ের কোলে জন্ম নিল এক কন্যা সন্তান। পরিবারের প্রথম সন্তান বলে খুব আদরের সে,বিশেষ করে তার দাদুর কাছে।কন্যাটির পরিবার খুব বেশি ধনী ছিল না,কিন্তু কন্যাটি হওয়ার পর তাদের পরিবার আস্তে আস্তে সচ্ছল হতে থাকল। আর এই কারণেই তার দাদু তাকে পরিবারের ভাগ্যবতী বলেই মানে, আর সেই কন্যাটিকে কাউকেই কিছু বলতেই দিতেন না তিনি,এমনকি তার মা বাবাকেউ না। কন্যা সন্তানটি হয়েছিল বেশ ফর্সা া সুন্দর নাদুস নুদুস পাড়া, তাই তার দাদু সবসময় তাকে সবার সুন্দর বলতেন তিনি বলতেন আমার নাতনি খুব সুন্দর খুব সুন্দর কিন্তু এই কথাবার্তা কন্যা সন্তানটির বাবা-মার পছন্দ ছিলেন না কোন সন্তানদের বাবা-মা তাদের শ্বশুরকে বলতেন বাবা এমন করে সব সময় সবার কাছে বলবেন না বলা তো যায় না ও এখন ছোট। তাই সুন্দর। কিন্তু বড় হয়েছে এই সৌন্দর্য থাকবে তার কোন মানে নেই। তাও কন্যা সন্তানটির দাদু শুনত না তিনি মনে করতেন তার নাতনি তার কাছে সবথেকে সুন্দর কন্যা সন্তানটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে তার কাছেও তার দাদু খুব প্রিয় হয়ে উঠলো সেও তো তার দাদুকে খুবই ভালোবাসতো। খুব খুশি আনন্দেতে দাদু নাতনি র জীবন কাটতে থাকে তারা খুবই খুশি ছিল তাদের বাড়িতে আরো তিনটে কন্যা সন্তান ছিল। কিন্তু তাদের অত দাদু ভালোবাসতেন না দাদুর কাছে বড় নাতনি ছিল তার প্রিয়।

হঠাৎ করে তার দাদু অসুস্থ হয়ে পরলেন দাদুকে নিয়ে সবাই হসপিটালে গেলেন। দু চার দিন হসপিটালে থাকার পর দাদু আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন। দাদুকে বাড়িতেও আনা হল বেশ কিছুদিন দাদু সুস্থই রইলেন হঠাৎ করে আবারো তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আবার তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো, কিন্তু এই হসপিটালে যাওয়াই ছিল তার শেষ যাওয়া।
হসপিটালে ২-৪ দিন বেঁচে থাকার পর হঠাৎই তিনি মারা গেলেন। দাদুর এই মারা যাওয়াতে পরিবারে সবাই খুব ভেঙ্গে পড়লেন। তাদের পরিবারটা কেমন ছন্নছাড়া হয়ে গেল। আর নাতনী সে তো একদমই অসুস্থ হয়ে পড়ল। কারণ সে তখন ছোট ছিল মারা যাওয়া কি জিনিস সেটা সে জানতো না কিন্তু দাদুকে না দেখতে পাওয়াই সে প্রতিদিন তার বাবা মাকে জিজ্ঞাসা তো করতো যে তার দাদুকে কেন সে দেখতে পাচ্ছে না? দাদু কোথায় গেছে? তখন তার বাবা-মা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলত দাদু আসবে ঠিক আসবে তোর কাছে এভাবেই তাকে সান্তনা দিয়ে রাখত। আস্তে আস্তে দাদুর বড় নাতনিও বড় হতে থাকলো তখন সে বুঝতে পারল যে তার দাদু আকাশের তারা হয়ে গেছে, তিনি আর কোনদিনই তার কাছে ফিরে আসবে না, আর তার সাথে খেলা ও করতে পারবে না, তার জন্য দোকান থেকে কোন চকলেটও আনবে না।


সে জানতে পারলো বড় হয়ে যে তার দাদু চেয়েছিল সে স্কুলে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করুক তখন সে দাদুর স্বপ্নপূরণের জন্য ভালোভাবে পড়াশোনা করতে লাগবে। ভালো রেজাল্টও করতে থাকলো। এবার আস্তে আস্তে শুরু হলো দাদুর নাতনির বড় হয়ে ওঠা ক্লাস ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ এভাবে সে প্রতিটা ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করে। কিন্তু যখন দাদুর নাতনি ক্লাস টু এ পড়ছিল তখন হঠাৎ সেই নাতনি জীবনে নেমে আসে অন্ধকারচ্ছন্ন হঠাৎ করে দাদুর নাতনি জীবনে ছেয়ে গেল ঘন মেঘ। দাদুর সেই সুন্দর ফুটফুটে ফর্সা মেয়েটি হয়ে গেল এক দাগ কাটা মেয়ে। সেই অন্ধকার জীবন থেকে সেই মেয়ে হারিয়ে ফেলল তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেল তার রূপ। কথাতেই আছে” রাখে হরি মারে কে। ” রূপ নিয়ে অহংকার করা বেশি ভালো না আর সেটাই দেখিয়ে দিলেন যিনি দিনরাত করেন। কিন্তু সেই মেয়েটার কি দোষ ছিল? যে তাকে এভাবে সবার কাছে শুনতে হতো তুই এমন তুই তেমন তোর এই জিনিসটা এমনি। তখন সেই মেয়েটি ভগবানের কাছে কাঁদতো আর তাকে দোষী করতো সে বলতো কি দোষ ছিল আমার? কেন এত বড় ক্ষতি করলে আমার? আমি তো কোনদিন রূপ নিয়ে অহংকার করিনি,যে কারণে আমার এত বড় একটা দাগ কেটে দিলে। তার জীবনে শুধু কান্নায় আর কান্না। সে ভেবেছিল এমন একটা দিন আসবে তখন তার কান্না থেমে হাসিতে পরিণত হবে এমন একজন তার জীবনে আসবে তাকে বুঝতেই দেবে না তার কাছে রুপ না, সেই মেয়েটিকেই সে চাই।
কি হয়েছিল সেই মেয়েটির হয়তো আপনারা জানতে চান কিন্তু এটা অজানাই থেকে যাক। এটা সে জানাতে চাইনি, আর কোনদিন পারবেও না। শুধু তার কষ্টের কথাটাই সে জানাচ্ছে।

Portrait of Indian family at home. Grandparent and grandchild eating butter cake. Asian people living lifestyle. Grandfather and granddaughter.

১৮ বছরের পর সেই মেয়েটি ফিরে পেল তার সেই ছোটবেলাকার রূপ সৌন্দর্য। কিন্তু কি আর হবে সেই রূপ সৌন্দর্য নিয়ে তারটা একটা দাগ হয়েই গেছে তাই না তাই সেই মেয়েটি আর রূপ সৌন্দর্যের কথা কিছু মনেই করে না। তার কাছে লোভ সৌন্দর্য থাকুক বা না থাকুক। তার শুধু মনে হচ্ছিল। আমার কাছে সবচেয়ে বড় একটা জিনিস আছে আমি শিক্ষিতা আর এটাই ছিল তার কাছে সবচেয়ে বড় অহংকারের জিনিস অবশ্য সে কোনদিন এটা নিয়েও অহংকার করেনি।
আস্তে আস্তে জীবনের সবচেয়ে বড় ক্লাসে উঠলো। সেটা হল মাধ্যমিক মাধ্যমিক এসে একটু অবশ্য খারাপ রেজাল্টই করল। কারণ সেই সময় টা ছিল বয়স ধরে রাখার সময়। কিন্তু সে একটু চঞ্চল হয়ে গেল। যে কারণে সে রেজাল্ট খুবই খারাপ করলো। কিন্তু সে মাধ্যমিক পেরিয়ে গেল। গিয়ে ভর্তি হল উচ্চমাধ্যমিক উচ্চ সে খুব ভালো রেজাল্টই করল তারপর ভর্তি হলো কলেজে সে কি নিয়ে পড়বে? এটা সে ঠিক করেনি তখনও। কিন্তু তার মেসোর স্বপ্ন ছিল তাকে ওকালতি পড়ানো তাই সে ভর্তি হল সেই ওকালতীর কলেজে। কলেজ জীবনটা মেয়েটির খুবই সুন্দর ছিল সে খুবই খুশি ছিলই কলেজ লাইফে। কলেজে অনেক বন্ধু বান্ধবী হয়েছিল। এই নিয়ে সে সবকিছু ভুলে মজা, আনন্দ হাসি ঠাট্টা নিয়ে থাকতো। খুব খুশি ছিল সে কলেজ লাইফে। আর এসব করতে করতেই প্রথম পরীক্ষাগুলোতে সে বাজে রেজাল্টই করল। কিন্তু তারপর পরীক্ষাগুলো সে ভালোই দিচ্ছিল কিন্তু হঠাৎই চলে এলো আমাদের দেশে “করোনা” যে কারণে লকডাউন হয়ে গেল। তাই সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। তো বাড়ি থেকেই সব কিছু অনলাইনে চলতো কিন্তু হঠাৎ করে সেই মেয়েটি সম্বন্ধ আসে বিয়ের প্রস্তাবের জন্য। তো তার বাবা-মা ভাবলেন মেয়ে তো বড় হয়েছে মেয়ের বিয়েও দিতে হবে। তো ভালো যখন সম্বন্ধ এসেছে বিয়ে দিয়ে দিই।……..

চলবে…….2 পর্ব

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: