অভিযানে প্রেম ও জাতীয় সংস্কৃতি: বাংলা ভাষা দিবস

অভিযানে প্রেম ও জাতীয় সংস্কৃতি: বাংলা ভাষা দিবস

Written By Taniya Parvin

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কি হতো যদি ভারতে বাঙালির অবস্থান না হতো?
কি হতো যদি পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মধ্যে না থাকতো?
কিছু পরিবর্তন আসতো কি?
এর উত্তর কারোর মতে হবে হ্যাঁ। আবার কারোর মতে হয়তো না।
বাংলা ও বাঙালি নানান ভাবে এই ভারতে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছে।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলা এবং বাঙালি সম্পর্কে ।
প্রথমে আমরা জানবো বাংলা ভাষা সম্পর্কে ।
বাংলা French পর সবথেকে বেশি artistic এবং beautiful ভাষা হিসেবেও জানা যায় ।
সব থেকে বেশি প্রচলিত এবং ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে বাংলা পুরো বিশ্বের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ।
পুরো বিশ্বের মধ্যে টোটাল ২১০ মিলিয়ন মানুষ বাংলাকে তাদের প্রথম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ।
বাংলা হচ্ছে বাংলাদেশের national language এবং পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার official language….
তার পাশাপাশি আসাম ,আন্দামান ও নিকোবার আইল্যান্ডেরও সেকেন্ড official language হচ্ছে বাংলা।
শুধু তাই নয় Sierra Leone দেশেরও official language….
যার গভারমেন্ট বাঙ্গালীদের সম্মান দেয়ার জন্য তাদের দেশের অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলা করে দিয়েছে ।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তে ঢাকা ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্রছাত্রীরা মিলে bengali language movement শুরু করেছিল পাকিস্তানের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সম্মান দেয়ার জন্য ।
যার ফলে কিছু ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যু ঘটেছিল ।
এই ঘটনার পর ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭ সালে UNESCO বাংলা ভাষাকে সম্মান জানানোর জন্য প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে International mother language day ঘোষণা করে ।
যদি বাংলা ভারতের মধ্যে না থাকতো তাহলে আজ ভারতের জাতীয় সংগীত “জন গণ মন” হতো না।
কারণ “জন গণ মন” সংগীতটি বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ।
এমনকি ভারতের রাষ্ট্র গীত “বন্দেমাতারাম”টিও একজন বাঙালির লেখা । যেটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন


পুরো বিশ্বের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান ,বাংলাদেশ, চায়না, জাপান ,ফিলিপিন্স ,থাইল্যান্ড, জার্মানি, USA, ব্রিটেন সব জায়গাতেই বাংলার রেডিও স্টেশন চলে এবং বাংলায় খবরের কাগজ বিক্রি হয় ।
বাঙালিরা পুরো পৃথিবীর মধ্যে নিজের নাম গড়ে তুলেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুরো এশিয়ার মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যাকে নোবেল প্রাইজ দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল ।
যদি বাঙালি ভারতে না থাকতো তাহলে ভারতের মুভিগুলোও প্রচলিত হতো না।
কারণ সত্যজিৎ রায় ভারতের প্রথম film maker যাকে Oscar দেওয়া হয়েছিল ।
তার বাংলা ফিল্ম পথের পাঁচালীর জন্য ।
ভারতের Best film makers দের মধ্যে অধিকতর বাঙালি । যেমন -সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ,মৃণাল সেন ,ঋষিকেশ মুখার্জি ,ঋতুপর্ণ ঘোষ, অনুরাগ বাসু, দেবাকর ব্যানার্জি ইত্যাদি ইত্যাদি …….
যদি বাঙালিরা ভারতের না থাকতো তাহলে আজ এডুকেশন দিক থেকেও এতটা এ এগিয়ে থাকত না।
কারণ –
চন্দ্রমুখি বসু ভারতের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট।
জোসেফ বোস ভারতের প্রথম ব্যক্তি যিনি Dr. Of letters খেতাব পেয়েছিলেন ।
প্রশান্ত চন্দ্র ভারতের প্রথম statistician ছিলেন।
এবং রাজেন্দ্রলাল মিত্র ভারতের প্রথম Indologist ছিলেন ।
টোটাল পাঁচ জন বাঙালি রয়েছে যারা ভারতরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন । বিধান চন্দ্র রায় ,সত্যজিৎ রায় ,অরুনা আসাফ আলি , অম্রত সেন, প্রণব মুখার্জি ।
ভারতের মধ্যে এমন অনেকেই মনে করেন যে বাঙালিরা বিজনেসে অতটা এগিয়ে নেয়।
কিন্তু কথাটা সত্যি নয় ।
এমন অনেক বাঙালি আছে যাদের সফলতার ছাপ বিজনেস ওয়ার্ল্ডেতেও রয়েছে ।
যেমন -বিকি চক্রবর্তী যিনি সুইডেনের সব থেকে বড় hotelier ,
সিদ্ধার্ত বসু যিনি “Brics energy “-এর Founder ।
অরুন্ধুতি ব্যানার্জি যিনি SBI এর প্রথম মহিলা director…
অমর বস যিনি বস কর্পোরেশনের ফাউন্ডার …
অশোক শেখর গাঙ্গুলী হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চেয়ারম্যান ….
ভাস্কর পারমানিক “Microsoft India ” -এর চেয়ারম্যান
সুব্রত রায় যিনি “SAHARA India ” -এর ফাউন্ডার।
অভিক সরকার আনন্দবাজার পত্রিকার ফাউন্ডার।
আরও অনেকে আছেন সবার নাম নেওয়া হয়ত সম্ভব নয়।
পিসি সরকার ও পিসি সরকার জুনিয়র বিশ্বের মহান ম্যাজিশিয়ান নামে পরিচিত ।
যদি মিউজিকের লিস্ট শুরু করি তাহলে হয়তো শেষ করা যাবে না ।
যেমন –
R. D Barman
S. D Barman
কিশোর কুমার
কুমার শানু
শান
শ্রেয়া ঘোষাল
বাপ্পি লাহিড়ী
মোনালি ঠাকুর
ইত্যাদি ইত্যাদি, এই লিস্ট তো শেষ করাই যাবে না ।

ইন্ডিয়ান আর্মিতেও বাঙালির অবদান রয়েছে ।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি এর ফাউন্ডার ছিলেন।
জয়ন্ত নাগ চৌধুরী 1965 সালে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সময় আর্মি চিফ ছিলেন ।
সুব্রত মুখার্জী ও অরুন রাহা ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের চিফ ছিলেন।
ভারতের প্রথম “military helicopter pilot” ও একজন বাঙালি যার নাম সুভীন্দ্র নাথ মজুমদার।
ইন্দ্রালাল রায় ভারতের প্রথম “Airforce pilot” ছিলেন..যিনি “flying ACE”নামে পরিচিত ।
যদি বাঙালি ভারতে না থাকতো তাহলে হয়তো আজ ভারত স্বাধীন দেশ হতো না ।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুটাই হয়েছিল বাংলা থেকে ।
বাংলায় এমন অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী রয়েছে যেমন- নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ,ক্ষুদিরাম বসু ,মাস্টারদা সূর্যসেন ইত্যাদি ইত্যাদি ….
এখন কথা বলা যাক খেলার ব্যাপারে….
মনোতোষ রায় যিনি এশিয়ার প্রথম bodybilder ছিলেন যাকে “mister universe “এর award দেয়া হয়েছে…..
পরেশ লাল রায় যাকে Indian boxing এর father ও বলা হয়ে থাকে ।
সৌরভ গাঙ্গুলীকে কে না চেনে …..
বিশ্বের” One of the best left handed batsman “এবং ভারতের একজন সফল ক্যাপ্টেন ।
চুনি গোস্বামী ভারতের সবথেকে বড় ফুটবল প্লেয়ার।
১৯৬২ সালে এনাকে এশিয়ার ” Best striker” -এর Award ও দেয়া হয়েছিল ।
সাঁতারে ….
বুলা চৌধুরী প্রথম মহিলা যিনি seven sea সাঁতরে পার করেছিলেন ।
আরতি সাহা ভারতের এবং এশিয়ার প্রথম মহিলা যিনি সাঁতরে ইংলিশ চ্যানেল পার করেন ।
মিহির সেন প্রথম ভারতীয় যিনি সাতরে ইংলিশ চ্যানেল পার করেছিলেন ।
আরো নানান জায়গায় বাঙালি নিজের ছাপ রেখে গেছে।
যেগুলো বলে শেষ করা হয়তো সম্ভব নয়।

সবশেষে আপনাদের সকলকে জানাই মাতৃভাষা দিবসের অসংখ্য শুভেচ্ছা।
আমি গর্বিত আমি বাঙালি………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: