অ্যালার্জি টিকার সংজ্ঞা, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবহার (Allergy Immunotherapy)

অ্যালার্জি টিকার সংজ্ঞা, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবহার (Allergy Immunotherapy)

Written By Anushree Dasgupta

সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য

অ্যালার্জি ইনজেকশন বা ইমিউনোথেরাপি (allergen immunotherapy) মূলত একটি চিকিৎসাজনিত পদ্ধতি, যেখানে রুগীর শরীরে তার-নিজেস্ব অ্যালার্জেনের (যেমন পলিন, ধূলিকা, বয়েল, পোচা ইত্যাদি) অত্যল্প পরিমাণ দেওয়া হয় নিয়মিত ইনজেকশনের মাধ্যমে। এর উদ্দেশ্য—রোগীর প্রতিরোধী তন্ত্রকে (immune system) সেই অ্যালার্জেনে ধীরে ধীরে “অভ্যস্ত” করে দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে সেই উৎসের সংস্পর্শে এলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া (প্রতিক্রিয়াশীলতা) না হয়। এই পদ্ধতিকে কখনও কখনও বলা হয় ‘সহ্যতা গঠন চিকিৎসা’ (desensitisation) বা হাইপো-সেন্সিটাইজেশন।

এই পদ্ধতিকে চিকিৎসা-ভাষায় বলা হয় “desensitization therapy” বা “allergen immunotherapy”

চিকিৎসার ধরন

অ্যালার্জির টিকা প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:

সাবকিউটেনিয়াস ইমিউনোথেরাপি (SCIT): এই পদ্ধতিতে ত্বকের নিচে ইনজেকশন দেওয়া হয়, সাধারণত বাহুর উপরের অংশে । এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকর পদ্ধতি বলে বিবেচিত ।

সাবলিঙ্গুয়াল ইমিউনোথেরাপি (SLIT): এই পদ্ধতিতে জিহ্বার নিচে ড্রপ বা ট্যাবলেট আকারে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় । রোগীরা বাড়িতে বসেই এই চিকিৎসা নিতে পারেন, যা সুবিধাজনক এবং খরচ সাশ্রয়ী ।

চিকিৎসার পর্যায়

অ্যালার্জির টিকার চিকিৎসা দুটি প্রধান পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:

বিল্ডআপ পর্যায়: এই পর্যায় সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাস স্থায়ী হয় । সপ্তাহে ১ থেকে ৩ বার ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং প্রতিবার অ্যালার্জেনের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা হয় ।

মেইনটেনেন্স পর্যায়: এই পর্যায় সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে পারে । এই সময় মাসে একবার টিকা নিতে হয় ।

কার্যকারিতার প্রক্রিয়া

অ্যালার্জির টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে । এটি রেগুলেটরি টি-সেল (Treg) তৈরি করে যা IL-10 এবং TGF-β নামক সাইটোকাইন নিঃসরণ করে । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে IgE অ্যান্টিবডির পরিবর্তে IgG4 অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ করে । এছাড়া এটি মাস্ট সেল, বেসোফিল এবং ইওসিনোফিলের কার্যকলাপ হ্রাস করে ।

Dr Booking

কার জন্য এটি উপযোগী?

  • যদি আপনার অ্যালার্জি মেডিকেশন বা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে এই ইনজেকশন বিবেচনা করা যেতে পারে।
  • ধূলিকা/ধুলো (dust mites), পশুপাঁচড়ার লোম, পলিন, ছত্রাক (mould)-সংক্রান্ত অ্যালার্জিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
  • এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে পোচা বা হানিপোকা (insect venom) সংক্রান্ত অ্যালার্জিতেও ইনজেকশন দেওয়া হয়।

পদ্ধতি ও সময়সীমা

  • প্রথম পর্যায়ে (বিল্ড-আপ ফেজ) রুগী সপ্তাহে এক-দু’বার ইনজেকশন পায়, যা ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়।
  • এরপর ‘রক্ষণাবেক্ষণ পর্যায়ে’ (maintenance phase) প্রতি ২-৪ সপ্তাহে একবার ইনজেকশন দেওয়া হয়, সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর ধরে।
  • ইনজেকশন পরবর্তী সময় রুগীকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ক্লিনিকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, কারণ খুবই কম সংখ্যায় হলেও গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

নিয়মমাফিক নেওয়ার ফলে বহু রুগীর ক্ষেত্রে অ্যালার্জি-লক্ষণ (হাঁচি, নাকে জল পড়া, চোখ খেয়ানা, শ্বাসকষ্ট) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

ভবিষ্যতে নতুন অ্যালার্জি হওয়া ও এডমা (asthma) বিকাশের সম্ভাবনাও কমাতে সাহায্য করতে পারে।

দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ-নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব — রুগী নিয়মিত ইনজেকশন নিলে ওষুধের ব্যবহার হ্রাস পেতে পারে।

ঝুঁকি ও কমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

  • সবার জন্য এক নয় — ইনজেকশন পেতে গেলে অবশ্যই অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের ব্যবস্থাপনায় হতে হবে।
  • ইনজেকশন নেওয়ার পর হালকা-মাঝারি প্রতিক্রিয়া যেমন ইনজেকশন সাইটে লালচে ভাব, ফোলা, হাঁচি বা কাশি হতে পারে।
  • খুব বিরল ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া যেমন শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া, অ্যানাফ্যাল্যাক্সি হতে পারে — তাই মেডিক্যাল সেটিংতেই দেওয়া হয়।

সীমাবদ্ধতা

  • খাদ্য অ্যালার্জি বা ওষুধ-অ্যালার্জির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সব সময় কার্যকর হয় না। রোগীর ক্ষেত্রে পরীক্ষা বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জরুরি।
  • ফলাফল অনড় নয় — প্রায় ৬-১২ মাসের মধ্যে উন্নতি ধরা দেওয়া শুরু হয়, পুরো প্রক্রিয়া সফল হতে ৩-৫ বছর সময় লাগতে পারে।

সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: অ্যালার্জি ইনজেকশন কি মোটেই ব্যথাহীন?
উত্তর: না — এতে একটু ব্যথা বা স্থানীয় ফোলাভাব হতে পারে, তবে সাধারণত সহনীয়। গুরুতর প্রতিক্রিয়া খুবই কম।
প্রশ্ন: আমার শিশুতে কি দেওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত বয়স ৫ বছরের উপরে শিশুদের জন্য এই থেরাপি দরকার পড়লে শুরু করা যায়।
প্রশ্ন: ইনজেকশন বন্ধ কি করা যাবে দ্রুত?
উত্তর: এটা দ্রুত বন্ধ করা ঠিক নয় — মাঝপথে বন্ধ করলে অ্যালার্জি পুনরায় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

উপসংহার

আপনি যদি এমন অ্যালার্জিতে ভুগছেন যেখানে প্রতিদিনের ওষুধ বা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট কাজ করে না — তাহলে অ্যালার্জি ইনজেকশন বা ইমিউনোথেরাপি একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। তবে এটা শুরু করার আগে অবশ্যই একটি অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ (allergist/immunologist)–র সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ—প্রতিটি রুগীর শরীর আলাদা প্রতিক্রিয়া করে, এবং চিকিৎসার সময়সীমা ও ফলাফলও ভিন্ন হতে পারে।

আপনি যদি চান, তাহলে আমি এই বিষয় নিয়ে বাংলায় একটি সম্পূর্ণ ব্লগ পোস্ট লিখে দিতে পারি (প্রায় ১,৫০০–২,০০০ শব্দ) যা কি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার-পর্যাপ্ত হবে?

“অ্যালার্জির চিকিৎসার অনেক ধরন আছে। তাদের মধ্যে টিকা একটি কার্যকর উপায়।”

“এই ইনজেকশনগুলো নিয়মিত নিলে ফলস্বরূপ, অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া অনেক কমে যায়।”

অন্যদিকে, কিছু রুগীর ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share:

RECENT POSTS