আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Part – 3

আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Part - 3

Written By Taniya Parvin

এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো …..
“দিদি এটা আপনাকে একজন দিতে বললেন! “
আমি তাকিয়ে দেখলাম অচেনা দুজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হয়তো এই বছর নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছে।
“ধন্যবাদ ” বলে আমি তাদের কাছ থেকে চিরকুটটি নিলাম।
তারাও বাই বলে সেখান থেকে চলে গেল।
চিরকুটটি হাতে নিতেই একটি পরিচিত পারফিউমের গন্ধ আমার নাকে থাকলো । বুঝতে পারলাম এটা কে পাঠিয়েছে ।
যেই না চিরকুট টা খুলে পড়তে যাব ,তার আগেই মাহি চিরকুটটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল ।
মাহি :শোনেন ! শোনেন! শোনেন !
আমার প্রিয় বান্ধবী তার পুরনো অথচ না হওয়া প্রেমিকের কাছ থেকে প্রেমপত্র পেয়েছে।
আসুন খুলে দেখা যাক তার প্রেমিক তার জন্য ঠিক কি লিখে পাঠিয়েছে ।
“মাহি বেশি বকছিস! চিরকুটটা দে তাড়াতাড়ি আমাকে…….”
মাহি: কেন দেবো ?আমি আমার জিজুর লেখা প্রেমপত্র পড়বো। তোমার কোন অসুবিধা থাকলে তুমি কান বন্ধ করে থাকতেই পারো।
রুহি: তুই ওর কথা ছাড়তো মাহি !তাড়াতাড়ি পড় কি লেখা আছে?
মাহি চিরকুটটি খুলে পড়তে লাগলো…….
ওহে হৃদয় হরনী ……..
এই অবুঝ মানবের হৃদয়ের সাথে এমন অবিচার কেন? এই অবুঝ হৃদয় যে যেকোনো সময় আপনাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে …….
তখন তার দায় কি নেবেন আপনি?
সেই আগন্তুকটি।।

সবাই :ওহো!!!!!!
রুহি :বাহ !বাহ !
আমাদের জিজু তো দেখি বিশাল রোম্যান্টিক ।
বলেই হাসতে শুরু করলো।
“বাজে বকা বন্ধ কর।”
কথাতে বলেই আমি মাহির হাত থেকে চিরকুটটা নিলাম।
চিরকুটে হাতে নিয়ে মুচকি হেসে নিজের হাত ব্যগের ভেতরে চিরকুটটিকে যত্ন সহকারে রেখে দিলাম ।
মাহি আমার কাজটা খুব সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করল।
তারপর হঠাৎ মাহি বলে ওঠে ……
মাহি:এটা তানি চল তো আমার একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে । আমাকে একটু হেল্প করবি ।
আমি মাহির কথায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠি…
“আচ্ছা ঠিক আছে চল”
বলে আমি আর মাহি ওয়াশরুমের দিকে যাওয়া শুরু করি।
ওয়াশরুমে যাওয়ার অর্ধেক রাস্তা যেতে না যেতেই মাহি আমার হাত ধরে আমাকে থামিয়ে দেয় ।
“কি হলো রে ?তোর না ওয়াশরুমে যেতে হবে? এভাবে দাঁড়িয়ে রয়ে গেলি কেন? “
মাহি :আচ্ছা তানি ,তোর মনে হচ্ছে না এবার তোর কিছু একটা করা উচিত?
“কিছু একটা বলতে ?”
মাহি :আমি জানি সেই আগন্তুকের প্রতি তোর মনে অন্য জায়গা তৈরি হয়েছে ,কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এক বছরের বেশি হতে চলল ….তুই তার নামটা পর্যন্ত জানিস না । তাকে কখনো দেখিস নি পর্যন্ত । তোর মনে হয় না, এভাবে আর আর কিভাবে বেশি দিন চলবে ?
“আমি কি করবো বল? সে তো নিজে থেকেই আমার সামনে আসে না ….”
মাহি: তাহলে তুই যা তার সামনে!
সে তোকে তার দিক থেকে সমস্ত ইঙ্গিত দিয়েছে। তুই কতটুকু করেছিস ?
মাহির কথায় আমি সত্যি ভাবনায় পরলাম।
আসলেই তো আমি তো কিছুই করিনি তার জন্য। নিজের মনের অবস্থা টুকু বোঝার মত ক্ষমতা আমার নেই।
আসলেই কি সে আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে? নাকি সে আমার ক্ষনিকের মোহ!
মাহি :সে যদি তোর সামনে না আসে, তুমি নিজে তার সামনে যা ….নিজে থেকে তোর মনের অবস্থাটা তার সামনে উপস্থাপন করে দেখ ।
না হলে দেখবি একদিন হয়তো সে হারিয়ে যাবে। তখন কিন্তু আর খুঁজে পাবি না তাকে । সারা জীবন আফসোস নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে একবার সাহস করে তার সামনে গিয়ে দেখনা।
মনে মনে ভাবলাম মাহি কথাটা ঠিকই বলেছে। আসলেই সে যদি কখনো হুট করে হারিয়ে যায় তখন?
কথাটি ভাবতেই বক্ষপিঞ্জরে চিনচিন ব্যথা হতে লাগলো।
না !যে কথাটি ভেবেই আমার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে সেই ঘটনাটি সত্যিকারে হতে দেওয়া চলবে না…..!!!!
এতদিন তো, সে তার মনের কথা আমার সামনে উপস্থাপন করে এসেছে। এবার আমি নিজে তার সামনে দাঁড়াবো । দেখি সে নিজের পরিচয় না দিয়ে কোথায় যায়?
কথাটি ভেবে মাহির দিকে তাকালাম ।
“আমি কালই তার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করব”
মাহি :এই না হলে আমার বান্ধবী …… এখন যাওয়া যাক বাকিরা চিন্তা করবে এখনো কেন যাচ্ছি না।

বলে আমরা আবার বাকি বন্ধুদের কাছে ফিরে এলাম। দিনটা এভাবে কেটে গেল।
কিন্তু সমস্যা হল ,বাড়ি ফেরার মুহূর্তে শুরু হল অঝোরে বৃষ্টি ।
বৃষ্টি কমতে কমতে বিকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো।
তখন বৃষ্টি ঝিরিঝিরি ভাবে পড়েই চলেছে ,কিন্তু সে তীব্র হারে বৃষ্টিটা কমে গিয়েছে ।
সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় একটু চিন্তিত লাগছিল । একা এতটা রাস্তা ।
মাহি: তুই এত সন্ধ্যায় একা যাবি কি করে ?বাইরে বৃষ্টি কিন্তু এখনো কমেনি ….সাথে তো ছাতা ও নেই তোর।
“আমি ঠিক কোন রকম ভাবে চলে যাব । তোরা যা ….”
মাহি :বাড়ি গিয়ে ফোন করিস !
“ঠিক আছে আসছি”
বলে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে পড়লাম। তখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হওয়ায় এবং সাথে ছাতা না থাকার কারণে প্রায় শরীরটা অনেকটাই ভিজে আসতে শুরু করল ।
শাড়িটা সাদা রঙের হাওয়ায় একদম শরীরের সঙ্গে লেগে যেতে শুরু করলো ।
আচলের পিনটা খুলে কোন রকমে আঁচলটা আরো একবার শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে নিলাম।
তারপরও খুব একটা সহায় হলো বলে মনে হলো না। খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। কি করব ?বাসস্ট্যান্ডের দিকে দেখলাম আমি একা …..
চায়ের দোকানে অনেকগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে ।
তার সাথে রয়েছে সেই আগন্তুকটিও ।
এত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়িনি।
কোনরকমে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলাম ।
কিন্তু বাস এখন পাবো বলে মনে হচ্ছে না ।
এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তার ঠিক নেই।
এসবই ভাবছিলাম মনে মনে ,তখনই চায়ের দোকানে সে ছোট ছেলেটি দৌড়ে দৌড়ে আমার সামনে এসে হাজির হলো ।
“দিদি ….দিদি ….”
“কি হলো, তুমি বৃষ্টিতে দৌড়াদৌড়ি করছ কেন? ‘
“দিদি এই এটি সেই ভাইয়াটি পাঠালেন “
বাচ্চাটির হাতে দেখলাম একটি কালো হুডি।
এটি চিনতে আমার এক সেকেন্ডেরও বেশি সময় লাগলো না।
আমি মনে মনে তাকে অনেকগুলি ধন্যবাদ দিয়ে হুডিটি বাচ্চাটির কাছ থেকে নিলাম।
“ধন্যবাদ ভাইয়া “
সে আমার দিকে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে সেটি আঁচলের উপর দিয়ে গলিয়ে নিলাম।
এখন অনেকটা প্রশান্তি লাগছে ।
সেই আগন্তুকটির দিকে চেয়ে দেখলাম ,সে ভেতরের একটি কালো টি শার্ট পড়ে রয়েছে । হুডিটি মাথায় ঢাকা দিয়ে না থাকায় তার চোখ দুটো এই প্রথম দেখতে পেলাম ।
সামনের চুলগুলো বৃষ্টির কারণে কপালের উপর নেমে এসেছে । মুখটা স্পষ্ট ভাবে দেখা না গেলেও যেন অদ্ভুত স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। আচ্ছা মানুষটি সবসময় কালো পড়ে কেন? সে কি জানে কালোতে তাকে অসাধারণ লাগে।
কথাটি ভেবেই হালকা হাসলাম ।
হুডিটির ভেতর থেকে আসছে সেই পরিচিত পারফিউমের গন্ধ ।
এমন সময় একটা রিকশা আছে আমার সামনে দাঁড়ালো।
“কি দিদি যাবেন নাকি? “
আমি রিকশাটি দেখে অবাক হলাম ।
কারণ এমন সময় এখানে রিক্সা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার ।
আমি তাকে আমার ঠিকানা বলতেই ,সে বলল উঠে……
“বসুন”
আমি উঠে বসলাম সে রিকশাটির ওপর ।
কিন্তু হঠাৎই আমার পাশে এসে আরো একজন পুরুষ অবয়ব বসলো।
মানুষটিকে আমি চিনি না। আমি তাকে একটু জায়গায় করে সরে বসলাম ।
রিকশায় একটা অচেনা মানুষের সঙ্গে বসতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম।
“দিদি রিক্সার হুডটি তুলে দিন তাহলে আর আপনাদের গায়ে বৃষ্টির জল পড়বে না “
আমি কথাটি শুনে পেছনে ঘুরে রিক্সা হুডটি যখন তুলতে যাব , তখন দেখি আগন্তুকটি বাইকে নিয়ে আমাদের রিক্সার পেছনে আসছে।
হঠাৎই আমার সব অস্থিরতা এক নিমিষের মধ্যেই কেটে গেল।
হুডটি টেনে খুবই স্বস্তির সঙ্গে রিকশায় বসলাম।
একটা আলাদা সাহস এবং প্রশান্তি বুঝতে পারলাম নিজের মধ্যে ।
কিন্তু কেন?
সেই আগন্তুকটিও তো আমার কাছে ঠিক ততটাই অচেনা,যতটা রিক্সার চালক এবং আমার পাশে বসে থাকা সে পুরুষ।
তারপরও তার প্রতি এতটা বিশ্বাস আমার কি করে? সত্যিই কি আমার মনে এতটাই জায়গা করে তুলেছে সে নিজের জন্য।
ভাবতে ভাবতে আমার বাড়ির রাস্তার গলিতে এসে পৌছালাম ।
রিকশা থেকে নেমে রিক্সা চালককে টাকা দিতে যাব তখনই সে বলে উঠলো,
“না….না …দিদি টাকা লাগবে না “
আমি তার কথায় অনেকটা অবাক হলাম ।
“কিন্তু কেন? “
“যেই ভাইয়াটি আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন তিনি আগে থেকে আপনার ভাড়া দিয়ে রেখেছেন”
কথাটি শুনেই আবারো একটি শীতল হাওয়া বুকের ভেতর দিয়ে বয়ে গেল ।
বুঝতে পারলাম রিকশাটি কে পাঠিয়েছিল ।
ভাইয়াটিকে ধন্যবাদ বলে আর একবার রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম ,সেই আগন্তুকটি এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে ।
রাস্তার গলি দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে হাটা ধরলাম।
বাড়ির ঠিক মেইন গেটে দাড়িয়ে আর একবার রাস্তার দিকে তাকালে দেখতে পেলাম, সে তখন বাইক ঘোরাচ্ছে।
না চাইতেও তার প্রতি আরো একবার মুগ্ধ হলাম ।
সে মানুষটার সবকিছুই আমাকে মুগ্ধ করে দেয় রোজ ।
বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলাম ।
মা :এ কি অবস্থা তোর ?কাক ভেজা হয়ে এসেছিস যে !যা ….যা ….তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে গোসল করে নে ,না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে ।
আমিও নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলাম।
এসে গায়ের হুডিটি না ধুয়েই বারান্দায় ঝুলিয়ে রেখে দিলাম শুকনো হবার জন্য।
আসলে তার গায়ের সেই পারফিউমের গন্ধটা মেটানোর কোন ইচ্ছায় আমার মধ্যে ছিল না।
বলে গোসল কড়ে বেরিয়ে দেখলাম ,,মা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মায়ের হাত থেকে কাপটা নিয়ে গরম গরম চায়ে চুমুক দিলাম।
এভাবে দিনটি আবার কেটে গেল……
পরের দিন…….

One Response

  1. My codser is trying to persuade me to move to .net from PHP.
    I have always disliked the idea because off the costs.

    But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on a variety off websites
    for about a year and am concerned about switching to another platform.
    I have heard excellent things about blogengine.net.
    Is there a way I can import all my wordpress posts into it?
    Anny help would be greatly appreciated! https://bandur-art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: