আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Part – 2

আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Part - 2

Written By Taniya Parvin

বাক্সটি খুলে দেখলাম তার ভেতরে রয়েছে কতোগুলি কাঠগোলাপ এবং একটি ছোট্ট চিরকুট ।
সাদার উপর হলুদ ছোঁয়া কাঠগোলাপ গুলি যেন দেখতে অসাধারণ লাগছে।
চিরকুট টি হাতে নিলাম। কেন জানিনা চিরকুট টি হাতে নিতেই মনে হল হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে চিরকুটটি খুললাম। চিরকুটটিতে লেখা ছিল………
“কোন এক বৃষ্টির দিনে
তুমি পরবে একখানা লাল পাড় সাদা শাড়ি,
হাত দুটি থাকবে তোমার আলতাই রাঙা ,
চোখের গহিনে দেবে কাজল,
লাল রাঙা থাকবে তোমার মুচকি হাসির রেখা,
আর আমি তোমার কোমর পর্যন্ত এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো হাত খোঁপা করে তাতে যত্ন সহকারে লাগিয়ে দেব এই বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ গুলি…….সেই আগন্তুকটি

চিরকুটটি পড়া শেষ করার বুঝতে পারলাম আমার ঠোঁটের কিনারে হাজির হয়েছে একটি তৃপ্তিময় হাসির রেখা ।
কিন্তু কেন ?..
কেন তার চিরকুট টা পেয়ে ভেতরটা এত সুখময় অনুভব হচ্ছে ।
শুধু এটা ভেবেই যে ,ওই আগন্তুকটি আমাকে তার ভবিষ্যতের কোন একটা অংশ মেনেছে…..
নাম না জানা, না দেখা অথচ পরিচিত সেই আগন্তুকটি তার জন্য তৈরি করেছে আমার মনের কিনারে আলাদা স্থান ।
সেটাও কি সম্ভব !
কাউকে না জেনে, না দেখে কিভাবে তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা যায়।
প্রতিদিন তার দেয়া এই একটা ছোট্ট চিরকুটের অপেক্ষায় থাকি আমি ।
চিরকুটটি পড়ে মনে হয় যেন কথাগুলো সে সরাসরি আমাকে বলছে ,কত দিনের পরিচিত সে আমার।
নিজের মনে মনে এমন হাজারটি কথা ভাবতে লাগলাম। তারপর বিছানা থেকে উঠে চিরকুটটি নিয়ে গেলাম আমার সে পুরনো ডায়েরির কাছে।
ডায়েরিটির একটি নতুন পাতা খুলে সেখানে সে চিরকুটটি যত্ন সহকারে লাগিয়ে দিলাম ।
কাঠ গোলাপগুলো রাখলাম পড়ার টেবিলের ওপর ফুলের ঝুড়িটাতে।
সেখানে রয়েছে গতকালের কতগুলি সাদা গোলাপ, প্রায় এখন অর্ধমৃত । একটু হেসে চলে গেলাম ঘুমাতে।
সে আগন্তুকটির কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম জানতেই পারলাম না ।

সকালে…………..

“ওমা……..মা ……….ওমা !!!!তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি দেখে দাও কোন শাড়িটা পড়ে যাব !
কোন শাড়িটা পরবো এখন?
কিছুই তো কালকে ঠিক করে রাখেনি ….
উফ ভালো লাগেনা!!!”
মা :সকাল সকাল ষাঁড়ের মত না চিল্লাচিল্লি করে কালকে রাত্রে সব ঠিক করে রাখতে কি হয়েছিল শুনি?
তুই তো জানিস আজকে সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হবে।
“ভুলেই গেছিলাম তো কালকে, এখন বলো না কোনটা করব?
কোনটা ভালো লাগবে?
এই লালটা ? না সবুজটা? না এই হলুদটা?
না! হলুদটা তো আগের বছর সরস্বতী পূজার সময় পরেছিলাম ।
আর লালটা !লালটা তো কিছু দিন আগে পড়েছিলাম একটা বিয়ে বাড়িতে ।
সবুজটা ! সবুজটার সাথে তো ম্যাচিং ব্লাউজ নাই !!…
আর কি পরবো ?ও মা দেখে দাও না ….”
মা :ধুর আমার হয়েছে যত জ্বালা !পারবোনা আমি দেখে দিতে। নিজে দেখে নাও। আগে থেকে ঠিক করে রাখবে না, আর সকালে উঠে আমার জান জ্বালাবে।
মা রাগ করে রুম থেকে চলে গেল।
“এ বাবা এবার আমি কি করবো? মা তো বলেও গেল না কোনটা পরবো।
এখন তো হাতে সময়ও নেই। কি করি ?”
হুট করে মনে পরল কালকে রাতে সেই চিরকুটের কথা।
“লাল পাড় সাদা শাড়ি ,হাতে আলতা, চোখে কাজল, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চুলে থাকবে খোঁপা, আর তাতে দেওয়া থাকবে কাঠগোলাপ। পারফেক্ট!! “
আমি এক ছুটে বোনের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের বাড়িতে একমাত্র বোনই আলতা পরতে পছন্দ করে । আর একমাত্র ওর কাছেই আলতা পাওয়া যাবে।
ওর রুমে আসতে করে ঢুকে বলে উঠলাম,
“বোনু কি করছিস ?”
মারিয়া :এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড ,এই কি বললে তুমি আমাকে?
আমি কি ভুল শুনলাম?
“কেন কি খারাপ বলেছি ?”
মারিয়া :না ,খারাপ নয় ,হঠাৎ করে এত ভালো কথা তো, তা কি চাই শুনি ?
“চাওয়ার থাকবে কেন ?আমি আমার বোনুর কাছে এমনি এলাম”
মারিয়া: আচ্ছা! এই আগের দিনের নেংটি ইঁদুর আজকে বোনু হয়ে গেল!
“হায় তুই নেংটি ইঁদুর কেন হতে যাবি ?তুই তো আমার গুলু গুলু হ্যামস্টার ….
মারিয়া: হ্যাঁ ! হয়েছে হয়েছে অনেক তেল দেয়া, এখন বলো কেন এসেছো ?
“বলছি তোর কাছে আলতা আছে? “
মারিয়া :কি করবে ?
“আরে আমি পড়তাম আর কি! আমার ইচ্ছা যাচ্ছে পড়তে । “
মারিয়া একটা অদ্ভুত রকমের চাহনি দিল আমাকে । তার পর হুট করেই সবটা বুঝতে পেরেছে এমন মুখভঙ্গি দিয়ে বলে উঠলো…
মারিয়া :ইচ্ছা !কেমন ইচ্ছা আমি বুঝে গেছি….দাঁড়াও আমি এনে দিচ্ছি ।
বলেই আলতাটা এনে আমার দুই হাতে পরিয়ে দিল।
আমি সেখান থেকে এক ছুটে বাইরে এসেই মায়ের রুমের দিকে দৌড়ালাম।
মায়ের আলমারিতে একটা লাল পাড় সাদা শাড়ি আছে! আমি দেখেছিলাম অনেক দিন আগে।
সেটা খুঁজে বার করলাম। রুমে এসে শাড়িটা নিজে নিজে পড়তে লাগলাম।
গত এক বছরে শাড়ি পরাটা খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছি। আসলে সেই আগন্তুকটা প্রতিবারই চিরকুটে শাড়ির উল্লেখ করে, তাই তো শাড়ির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছে।
আমি শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল দিলাম, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ,চুলগুলো মাঝখানে সিঁথি করে হাত খোপা করে নিলাম এবং কালকে তার দেয়া সে কাঠ গোলাপ গুলো কাটা দিয়ে আটকে খোপায় গেঁতে দিলাম ,কানে পরলাম ছোট্ট দুটি দুল।
ব্যাস !
আমি রেডি।
বলেই আয়নায় নিজের দিকে তাকালাম । আয়নায় কিছুক্ষণ নিজের দিকে স্তব্ধভাবে তাকিয়ে রইলাম। আচ্ছা এটা কি সত্যি আমি! আমি কি সত্যি সুন্দর ?নাকি সেই পছন্দের মানুষের পছন্দ মত সেজেছি বলে আমাকে এত সুন্দর লাগছে।
নিজেই নিজের প্রশংসা করতে লাগলাম।
তারপর একটা হাত ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
নিচে আসতেই দেখলাম মা আর বোন বসে আছে।
আমাকে দেখতেই দুজনে একসঙ্গে বলে উঠলো…
“বাহ্ সুন্দর”
মা আমার কাছে এসে বলল..
মা: আমার মেয়েকে তো দারুন মিষ্টি লাগছে দেখতে, তোর মাথায় হঠাৎ করে এরকম সাজার খেয়াল কোথা থেকে আসলো। আগে তো সাজিস নি?
ভীষণ সুন্দর লাগছেস এভাবে ।
আমি মায়ের কথাই একটু মুচকি হাসলাম।
তারপর তাদেরকে বাই বলে বেরিয়ে পড়লাম কলেজের উদ্দেশ্যে।
রাস্তার মোর থেকে একটি রিক্সা ডেকে তাতে উঠে বসলাম।
রিক্সাটি চলতে শুরু করলো।
রিক্সায় বসে ভাবতে লাগলাম …
আচ্ছা আমাকে এমন সাজে আগন্তুকটির মনোভাব কেমন হবে?
সে কি খুশি হবে?
তার মনের মতো করে সেজেছি বলে…
ভাবতে ভাবতে রিক্সা কলেজের সামনে এসে দাঁড়ালো।
ভাড়া মিটিয়ে আমিও নেমে পরলাম।
নামতেই চোখ গেল সেই আগন্তুকটির দিকে।
তার চোখ যেই আমার দিকে পরলো দেখলাম সে বসা থেকে হুট করে উঠে স্তব্ধ হয়ে আমার চেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
তার এমন আচরনে কিছুটা লজ্জা পেলাম। আর তার দিকে তাকানোর সাহস হলো না। সোজা কলেজের মধ্যে চলে গেলাম।
এখানেও সব বন্ধুরা আমার খুব প্রসংশা করলো।
সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো………

5 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: