আগন্তুকের পরিচয়ের আসর

আগন্তুকের পরিচয়ের আসর

Written By Taniya Parvin

“চল তাহলে এখন আমি আসলাম আবার কালকে দেখা হবে। কালকে তো আবার নবীন বরণ অনুষ্ঠান । “
সবাই: আচ্ছা।
মাহি :তাড়াতাড়ি চলে আসিস কাল । বেশি দেরি করবি না ।
সবাইকে বাই বলে কলেজ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।
গন্তব্য বাস স্ট্যান্ড।
আসুন হাঁটতে হাঁটতে আমার পরিচয়টা দেওয়া যাক।
আমি তানিয়া ।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী । আমার বাকি বান্ধবীদের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে উল্টোদিকে হাওয়ায় আমাকে রোজ একাই আসা যাওয়া করতে হয়।
কি কষ্ট! 😞
সে যাই হোক,….
হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি এসে পৌছালাম। বাসস্ট্যান্ডের ঠিক উল্টো দিকে চায়ের দোকানটার সামনে দেখতে পেলাম একটি পরিচিত কালো বাইক।
একটু আশে পাশে খেয়াল করতেই ,দেখতে পেলাম একটি পরিচিত আগন্তুক ।
সেই কালো বাইকটার মালিক।
যাকে রোজ কলেজ শুরুর সময় এবং ছুটির সময় এই একই জায়গায় দেখতে পাই আমি ।
কিন্তু তার মুখটা দেখা এখনো আমার ভাগ্যে জোটেনি।
সব সময় মাক্স এবং হুডি দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখে ।
তার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলাম।
এমন সময় পাশ থেকে একটি বাচ্চা ছেলে আমাকে ডেকে উঠলো !
ছেলেটাকে আমি চিনি। এই সামনে চায়ের দোকানে কাজ করে ।
“হুম বলো”আমি তাকে বলে উঠলাম ।
“দিদি এটা একজন ভাইয়া আপনাকে দিতে বললেন” বলেই আমার হাতে একটি মাঝারি সাইজের বাক্স ধরিয়ে দিল।
এটা পেয়ে খুব একটা অবাক হলাম না । কারণ গত এক বছর ধরে এটা আমি রোজ পেয়ে চলেছি। আর এটা কে পাঠিয়েছে, সেটাও আমার জানা।
বলেই একটা মুচকি হাসি দিলাম।
“ধন্যবাদ ভাইয়া ” আমি বাচ্চাটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে, নিজের ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বার করে তার হাতে দিলাম ।
সে খুশিমনে সেটাকে নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। আমি বাক্সটা খুলে দেখতে যাব তার আগেই বাস এসে পরল ।
আমিও বাক্সটা ভালো করে ধরে বাসে উঠে পড়লাম । বাস চলতে শুরু করলো । বাসটা একটু এগোতেই আমি জানালা দিয়ে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম, সেও তার বাইকটা স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।
আমি নিচের সিটে মাথায় এলিয়ে সেই বাক্সটার দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকলাম ।
বাস এসে পৌঁছালো আমার গন্তব্যে। বাস থেকে নেমে নিজের বাড়ির দিকে হাটা ধরলাম।
বাড়ি ফিরে নিজের কলেজের ব্যাগ এবং সেই বাক্সটি বিছানার ওপর রেখে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
একেবারে গোসল সেরে রুমে আসলাম।
এখন বাক্সটি যেই হাতে নিতে যাব তখনই আমাদের বাড়ির গেছো বাঁদরটা পেছন থেকে বলে উঠলো…
মারিয়া: আপামনি …… তোমার প্রেমিক আজকে কি দিয়ে পাঠালো গো তোমাকে??…
( এ আবার হাজির হয়েছে আমার জান জ্বালাতে) আমি মনে মনে বলে উঠলাম।
“কি চাই তোর? নেংটি ইদুরের মতো লেজ উঠিয়ে যেখানে সেখানে চলে আসিস কেন? তোর নিজের কোন কাজ নেই? “
মারিয়া: এই কি বললে তুমি আমাকে?? এই কালকে তুমি আমাকে চামচিকা বলেছিলে আমি কিছু বলিনি, আবার আজকে নেংটি ইদুর ছি ছি ছি….. এই আমাকে দেখে কি তোমার চিড়িয়াখানা বলে মনে হয়?
( চিড়িয়াখানার থেকে কমটা কি ! রোজ নতুন রুপ পাল্টায়)
মারিয়া: ধুর… আমার আচ্ছা খাসা মুডটাই খারাপ করে ছেড়ে দিলো।
কতো খুশি মনে আমি দুলাভাই এর গিফ্টটা দেখতে এলাম আমি 😔।
” এই এই কোন জন্মের দুলাভাই লাগে সে তোর? আর একটু আগে তুই কি বল্লি? কার প্রেমিক হ্যাঁ? তার নামটা পর্যন্ত জানিনা আমি। “

মারিয়া : আচ্ছা সে যদি তোমার প্রেমিক নাই হবে, তাহলে আজ পর্যন্ত তার দেয়া প্রতিটা ফুল এবং চিরকুট তোমার ডাইরির পাতায় যত্ন সহকারে তোলা কেন ?
বোনের কথায় কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম । আসলে এর উপর পাল্টা বলার মত কিছু খুঁজে পেলাম না। কারণ কথাটা সে ঠিকই বলেছে ।
প্রথম প্রথম তার দেয়া ফুল এবং চিরকুট গুলো ফেলে দিলেও, কিছুদিন পর থেকে তার দেওয়া ফুল এবং চিরকুট খুব যত্ন সহকারে ডাইরির পাতার সঙ্গে আটকে রেখেছি । কেন রেখেছি ?আমি জানিনা !
শুধু এটা জানি ,সেগুলো ফেলে দিতে আমার মন সায় দেয় নি ।
মারিয়া আমার নিস্তব্ধতা দেখে একটু হাসলো ।
মারিয়া: তা আজকে কোন ফুল পাঠালো তোমায়? প্রত্যেকদিন তো আমার দুলাভাই নতুন নতুন ফুল দিয়ে পাঠায় ।
“তুই চুপ করবি ?কেন এসেছিস সেটা আগে বল! “
মারিয়া: এই রে! একেবারে ভুলে গেছি ….মা তোমাকে তখন রান্নাঘরে ডেকেছিল ।
আজ মা জননী আমার কপালে করে ছেড়ে দেবে রে? তুমি তাড়াতাড়ি আসো আমি যাচ্ছি।
“সব সময় কাজের কথা লাস্টে বলিস আর বেফালতু কথা আগে। তাড়াতাড়ি যা আমিও আসছি।
বলে মারিয়ার সাথে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম ।
বাক্সটা আর খুলে দেখা হলো না ।
সারাটা সন্ধ্যা ভেতরে আনচান করতে করতেই কেটে গেল ।
রাতে ডিনার করে রুমে আসলাম। এসে গিফটের বক্সটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসলাম।
এবার শান্তি ভাবে এটা খুলে দেখতে পারব ।
বাক্সটা খুলে দেখলাম……

8 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: