অভিশপ্ত ভালবাসা পর্ব 3

অভিশপ্ত ভালবাসা পর্ব 3

Written By Taniya Parvin

এখন আমাদের জঙ্গল টা থেকে যাওয়ার সময় এসে গেছে । কিন্তু আমার মনের ভেতর এক অদ্ভুত কম্পন আসছে। আমার চোখ এদিক সেদিক দেখে চলেছে । হয়তো কাউকে একটি বার দেখার ইচ্ছায় ।
আমি সেই যুবকটি কে শুধু একটিবার ,শুধুমাত্র একটিবার আমার সামনে দেখতে চাই। আমার ভাবনায় শুধু সেই যুবকটির কথায় চলছে চলতে থাকলো।
দিশা: নুর…..নুর……নুর…….কোথায় হারিয়ে গেলি ??
নুর: আমাকে বলছিস ?
দিশা: সে কখন থেকে ডেকে চলেছে তোকে !তাড়াতাড়ি আয় যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে আমাদের।
পুরোটা রাস্তায় আমি শুধু সেই যুবকটিকেই খুঁজেছি । কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে ……কেউ আমাকে দূর থেকে দেখে চলেছে !!!
কে ছিল সেই যুবক???সেই জঙ্গলেই অর্ধনগ্ন অবস্থাতেই বা কেন ঘুরে বেড়াচ্ছিল???আমিই বা তার কথা এত ভাবছি কেন???সে শুধু আমাকে বাঁচিয়েছে বলে? নাকি আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ????
না না ……..

আমি সবে বাড়িতে ঢুকলাম। ঢুকেই দেখতে পেলাম তারা দুজনে বসে খাচ্ছে । আমি সে এসেছি এতে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপও দেখা গেল না । আমি পাশে তাকিয়ে একটি ফুলদানি দেখতে পেলাম, সেটি মেঝেতে ফেলে দিলাম। সেই আওয়াজে তাদের ধ্যান ভাঙলো।
মিস্টার মাহমুদ :তুমি চলে এসেছো!
মিসেস মাহমুদ :তুমি দেখলে ও আমার প্রিয় ফুলদানি টা ভেঙে ফেলল ।
নুর :ওহ সরি রুহি ………
মিস্টার মাহমুদ: নুর!!!উনি তো আমার মা হন ।।
নুর: উনি আমার মা নয় ! উনি শুধুই আপনার স্ত্রী। আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী।।।।।
মিসেস মাহমুদ: নূর ঠিকই বলেছে………….ও কখনোই আমাকে আপন ভাবেনি।
নুর :মিসেস মাহমুদ দয়া করে আপনার এই নাটকটা বন্ধ করুন।
মিস্টার মাহমুদ: নুর নিজের ব্যবহার ঠিক করো!!!!!!!
নুর: কথাটা আমাকে না বলে নিজের স্ত্রীকে বলুন, তার এটার খুবই দরকার আছে ।।।
মিসেস মাহমুদ : তুমি কি বলছো নুর !!!আমি তোমার মা হই……
নুর: দয়া করে আপনার এই ভালো মানুষের নাটক আপনি বন্ধ করুন। আমি খুব ভালো করে জানি আপনি কেমন প্রকৃতির মানুষ।
মিস্টার মাহমুদ :নুর !!!!!!
নুর :উনি শুধু আপনার সামনে ভালো মানুষ এই নাটক দেখাতে আসে ,সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। btw…..মিস্টার মাহমুদ আপনাকে একটা কথা মনে করানোর ছিল…..আজকে আমার জন্মদিন ।।।আপনার so called princess এর জন্মদিন ।।।।যেটা আপনি মনে রাখার প্রয়োজন মনে রাখেননি ।।।।
বলেই আমি নিজের রুমের ভেতর চলে আসি । নিজের মায়ের ফটো ফ্রেমটা হাতে নিয়ে কান্না করতে থাকি ।
নুর: কেন আমাকে ছেড়ে চলে মা । তুমি ছাড়া যে আমাকে আর কেউ ভালোবাসে না ।।।।।।।
মা তুমি জানো একজন অচেনা যুবক আমাকে আজকে বাঁচিয়েছে,,কিন্তু তার সাথে আর আমার দেখা হয়নি।
নুর যখন কান্না করছিল তখন হঠাৎই জানালা থেকে আওয়াজ আসে।।।নুর সেদিকে তাকিয়ে দেখে জানালাটির পাল্লাটি খোলা । সেটা যখন বন্ধ করতে যায় একটি ঠান্ডা বাতাস এসে তার মুখমন্ডল স্পর্শ করে। কেন যেন হঠাৎ করে মনে হল বাতাসটা তার চোখের জল মুছে দিতে চাইল।।।।।।।।।
নুর চোখের জলটি আলতো করে মুছে । জানালাটি বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল।।।
কিছুক্ষণের মধ্যে নূর ঘুমিয়ে গেল । কিন্তু সে জানতে পারল না কেউ একজন তাকে দেখছে । হয়তো কোন যুবক…………..

হ্যাঁ !!!!এটা সেই যুবকটিই……..
যুবকটি নূরের রুমের ভেতর প্রবেশ করল।।সে নূরের বিছানায় বসে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ । তারপর ওর এলোমেলো চুলগুলো মুখের সামনে থেকে সরিয়ে খুব যত্ন সহকারে কানের পাশে গুছিয়ে দিল। তারপর তার ললাটে আলতো করে স্পর্শ করল ।
হঠাৎ করেই নুরের ঘুম ভেঙে গেল । সে তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো । নুরের সারা শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। নুর নিজের চেহারার ঘাম টুকু হাতে করে মুছে নিল। সে এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজলো কিন্তু পেল না।
সেই যুবকটি………এইতো এখানেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল ………..নাকি এটা কোন স্বপ্ন ছিল????
এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে !!!
আমি বা কেন বারবার সেই যুবকটির কথাই ভাবছি???না এমন চলতে থাকলে আমার পাগল হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
Just stop thinking about him noor!!!!!!
কথা গুলি ভেবে নুর আবারও ঘুমাতে গেল ।।।।কিন্তু জানলাটি তখনো খোলাই রয়ে গেল!!!!!!!!

পরের দিন কলেজে………..
দিশা :মানে …..তুই বলতে চাইছিস …..তুই এক অচেনা ছেলেকে কিস করেছিস????……..
নুর: না ……..ওটা শুধুই একটা অ্যাক্সিডেন্ট !!!!!
দিশা :চুপ কর তুই ……..এই তুই আগের দিন আমাকে বললি যে তুই ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয় আর এখন দেখ……..
নুর :আমি এখনো বিশ্বাস করিনা………..
দিশা: আবার তুই মিথ্যা কথা বলবি ……….এই তুই বললি কাল এই ছেলেটাকে তোর স্বপ্নে দেখেছিস! আবার আমাকে বলছিস তুই তাকে ভালোবাসিস না………….
নুর :দিশা (কিউট মার্কা চেহারা দেখিয়ে বলল) !!!!
দিশা: এখন বল…….তোর স্বপ্নেও কি ছেলেটা শার্টলেস ছিল ????
নুর :দিশা…..তুই কিন্তু মার খাবি এবার আমার হাতে!!!!!বেশি বকে ফেলছিস ………
দিশা :হ্যাঁ হ্যাঁ……সত্যি কথা সবারই গায়ে লাগে।
যাই হোক চল এখন ক্লাসে যাওয়া যাক।
নুর এবং দিশা গিয়ে নিজেদের জায়গায় বসল।
ক্লাস শেষ হবার পর …..
নুর এরকম এসাইনমেন্ট কে দেয় ভাই ।।।।।এসাইনমেন্টাও কিসের উপর দাখ আত্মা, কালো জাদু, অর্ধ মানব, vampire এর ওপর!!!!!(বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে বলল)
দিশা: আর যাই হোক এটা আমাদের বিষয় থেকে তো বেশিই ইন্টারেস্টিং।
নুর: হ্যাঁ হ্যাঁ ……
দিশা: যদি তুই বিরক্তি বোধ করিস তাহলে তুই তোর হিরোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারিস ।।।।।
নুর: এবার তুমি সত্যিই তাকে দেখতে চাই।
Someone : hello everyone …..
হঠাৎ ই কারোর কথা বলায় নুর সেই দিকে তাকালো। তাকানোর সাথে সাথে নুরের মনে হলো যেন তার সামনে সবকিছু থেমে গিয়েছে। হঠাৎই নুরের বুকে অদ্ভুত কম্পন হতে লাগলো। নুরের সামনে সেই জঙ্গলের যুবকটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ।
দিশা :নুর…..নুর …… এই নুর …….কি হল তোর!!!দিশা নুর কে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে বলতে লাগলো ।
নুর : দি..দিশা এ..এটা সেই জঙ্গলের ছেলেটি ।।
দিশা: ও আচ্ছ………..কি??????!!!
নুর:হ্যাঁ…
হঠাৎ যুবকটিও নুড়ের দিকে তাকালো । যুবকটির চোখ দুটো তখনও লাল কিন্তু আগের মতো অতটাও না। তারপর ধীরে ধীরে সেই নুরের দিকে এগোতে শুরু করলো । নুরের শরীর অস্বাভাবিকভাবে ঘামে ভিজে যেতে লাগলো। নুরের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে চলেছে।
যুবকটির পেছনে সিটে বসে গেল।
দিশা: ছেলেটি কিন্তু দেখতে দারুন। আমার মনে হয় ওই কলেজের নতুন এসেছে ।
নুর :কিন্তু এই ছেলেটি এখানে কিভাবে……
ছেলেটির পেছনে বসে নিজের ফোনটা দেখতে লাগলো। স্যার :গুড মর্নিং ক্লাস!!!
সবাই :গুড মর্নিং স্যার।।
আবার তার সাথে নুরের চোখের মিলন হলো।
নুর: আমাকে যুবকদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে । এরকম অদ্ভুত অনুভূতির কারণ কি আমাকে জানতে হবে । এবার মনে হচ্ছে যেন আমি সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছি ।আহ্হ্!!!
একজন ব্যক্তি বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সে তার চোখে মুখে জল দিল। তার একটি লকেট তার শার্ট থেকে বাইরে থেকে বেরিয়ে আসলো । যুবকটি সেই দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ।
যুবক :পাথর এখানে চলে এসেছে। শুধু তার জন্য…..এই কলেজে । কিন্তু তার ভালোর জন্য হলেও আমাকে তার থেকে দূরে থাকতে হবে। আমায় নিজেকে নিজের সীমার মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু সে যতটাই আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আমার মনে হয় আমি নিজেই নিজের আয়ত্তের মধ্যে নেই । ‘ইমরোজ খান পাথরের ‘বুকেও ফুল ফোটানোর স্পর্ধা দেখিয়েছে সে । অবিশ্বাস্যকর……বলেই একটা হাসি দিল ।
যখন যুবকটি নিজে ভাবনার মধ্যে হারিয়েছিল তখন কেউ একজন তার পিছনে এসে দাঁড়ালো।
পাথর পেছনে তাকিয়ে দেখলো মানুষটি অন্য কেউ নয় নুর ।
নুর :শোনো তোমার সাথে আমার দরকারি কথা আছে। সেদিন জঙ্গলে আমাদের দেখা ………
নুরকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই পাথর বলতে শুরু করল ।
পাথর: সেদিন কি ঘটেছে …….কেন ঘটেছে……..সব ভুলে যাও সেটাই ভালো হবে।
নুর :কিন্তু আমার কথাটি শোনো ……..
পাথর :তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যদি তুমি আমার থেকে দূরে থাকো।
বলেই পাথর সেখান থেকে চলে আসতে যাবে তার আগেই নুর তার হাত ধরে ফেলল ।
নুর :কেন দূরে থাকব ???
পাথর :ছাড় আমাকে ….
বলেই নিজের হাতটা ছাড়িয়ে সেখান থেকে চলে গেল। এদিকে নুর এখনো সেখানে বিষ্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাত্রির সময়……
এখানে একজন তার প্রিয় টেডিটাকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে। কিভাবে সেই যুবকটি তাকে বাঁচালো …….সেই যুবকটির অধরের স্পর্শ………কিভাবে তার দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মেলানো……কিভাবে সে এতটা সুন্দর দেখতে….
নুরের মুখের হাসি যেন সরছে না। পাগলের মতো নিজের ভাবনা হেসেই চলেছে। কিন্তু হঠাৎই রাগ দেখিয়ে উঠে বসলো ,যখন তার মনে পড়ল যুবকটি তাকে কিভাবে কথা শোনালো । তার মনে পড়ল যুবকটির বলা কথাটি “তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যদি তুমি আমার থেকে দূরে থাকো”
নুর: কেন তুমি এমন বললে হ্যাঁ? কেন আমাকে অবহেলা করলে ?আমার যে কষ্ট লাগছে ….. যেভাবে তুমি আমার দিকে তাকাও সেটা আমায় এক আলাদা শিহরণ দায়।কিন্তু তুমি এত নিষ্ঠুরতার সাথে কথাগুলো বললে । কষ্ট হলো তো আমার ….তবে তুমি ভেবোনা যে আমি সত্যি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি (হয়তো)…..you jungle boy….
অন্যদিকে একজন যুবক punching bag জোরে জোরে ঘুষি দিচ্ছে….
পাথর :কিভাবে আমি তাকে এতগুলো কথা শোনাতে পারলাম …..কিভাবে আমি তাকে অবহেলা করতে পারলাম…..কিন্তু আমি যদি তার সাথে বেশি মিশতে থাকি এটা তার জন্য ভালো হবে না । আমার সত্যি নিজের ওপর রাগ হচ্ছে …..আমি এখানে তার জন্য এসেছি …কিন্তু কেন কেন আমি ফিরে যেতে পারছি না????
নুর তুমি কি করছো আমার উপর !!!
আমি যে তোমাকে বলতে পারব না আমি তোমার জন্য কি অনুভব করি । আমি এখানে শুধু তোমার জন্য এসেছি। যেখানে আমি কখনো এখানে আসতে চাইনি। কিন্তু তাও আমি তোমার কাছে পারিনি । আমি তোমাকে বললাম যে তুমি যেন সবটা ভুলে যাও….কিন্তু আমি নিজেই সেটা সারাদিন ধরে শুধু সেটাই ভাবতে থাকি।।।।।
Punch…….ahhhh……..punch……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: