অভিশপ্ত ভালবাসা পর্ব 5

অভিশপ্ত ভালবাসা পর্ব 5

Written By Taniya Parvin


নুর: আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না ,কিন্তু প্লিজ আজকে তুমি আমার সাথে ডিনার ডেটে যাবে।
পাথর :(পাথর ওকে থামাও ……..কিন্তু আমি পারছিনা কেন আমি নুরের সামনে কিছু বলতে পারি না । পাথর নিজেই নিজের মনে মনে কথাগুলো বলতে লাগলো) পাথর :না ……
নুর: আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি না জানিয়ে দিচ্ছি। এবার তুমি আমাকে বলবে যে কোথায় ?….
পাথর :আমার বাড়িতে!!!
নুর :তুমি এতো বোরিং কেন???আমরা কি অন্য কোথাও যেতে পারি না????
(পাথর নুরের দিকে এক অদ্ভুত চাহনি দিল)
নুর :ঠিক আছে ….ঠিক আছে বাবা …..তুমি এমন ভাবে কথা বলছো যেন তুমি ২০০ বছরের পুরনো দাদু।।।

(নুর হেসে বলল)
নুর নিজের সব জামা কাপড় এখানে সেখানে ছড়িয়ে রেখেছে….
নুর :এটাও ভালো না……..
দিশা :এটা কি আমার সেই বান্ধবী যে নাকি ভালোবাসায় বিশ্বাস করত না !!!!
( নুর ব্লাশ করতে করতে বললো )
নুর: If it’s called love then I am in love…….. পাথর আমাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে ……যখনই সে আমার কাছে থাকে আমার মনে হয় আমি সত্যিই খুশি । কিন্তু সে যখন আমার আশে পাশে থাকে না তখন আমার মনে হয় কিছু একটা যেন আমার কাছে নাই !!সারাটাক্ষণ অস্থিরতায় ডুবে থাকি আমি।
নুর পাথরের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে, নূরের ভেতর অস্থিরতা ব্যাকুলতা সবটাই একসঙ্গে কাজ করছে।
নুর একটা জোরে শ্বাস নিয়ে দরজা ধাক্কা দিল। পাথরে এসে দরজা খুলে দিল।
নুর:hi ……….
পাথর একদৃষ্টিতে নুরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নুর কিছুটা লজ্জা পেল।
নুর :আমি কি ভেতরে যেতে পারি?
পাথর :হ্যাঁ কেন নয় ….(একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বলল) এই প্রথম নুর পাথরকে হাসতে দেখল ।
নুর :তোমার বাড়িটা অসম্ভব সুন্দর…..(নুর বাড়ির সবটা দেখতে বলল)
নুর: সবটাই ঠিক আছে …..কিন্তু ?
পাথর :কিন্তু কি???
নুর :খাবার কোথায়????
পাথর আমি রান্না করতে ভালোবাসি। তাই আমরা একসাথে খাবারটা বানাবো।
নুর :ঠিক আছে…
নুর :wow পেইন্টিং গুলো কি সুন্দর !এগুলো কি তুমি করেছ?
পাথর: হ্যাঁ ….(একটা হাসি দিয়ে বলল )
নুর :তুমি তো দারুন সুন্দর ছবি আঁকো। আমার ছবিও একদিন বানিয়ে দিও ।
পাথর: অবশ্যই…….এখন যাওয়া যাক রান্নাটাও করতে হবে।
তারা দুজনে রান্না ঘরে এসে উপস্থিত হল ।
পাথর জল নেওয়ার জন্য হাতটা বাড়াতেই তাদের হাতে স্পর্শ লাগে, তার একে অপরের দিকে তাকায়।
পাথর:ও..ওটা আমি নিচ্ছি!
নুর :হু হু….(নিচের দিকে তাকিয়ে বলল )
তারপর তারা ডিনার বানাতে লাগলো। নুর রান্না করছিলো এমন সময় পাথর ঠিক নুরের পেছনে এসে দাঁড়ালো।
এখন নূরের হৃদস্পন্দন কয়েক গুণ বেশি পরিমাণে চলতে লাগলো। নুর পাথরের নিঃশ্বাসটাও অনুভব করতে পারছিল । এমন সময় নুর কিছু একটা ভেবে পিছনে ঘুরল । তারা একে অপরের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল।
নুর: so you love me ha…….
পাথরের ধ্যান ভাঙলো নুরের কথায়। সে নুরের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল…
পাথর: সাট আপ ….
নুর: তাই ….
নুর পাথরের দিকে এগোতে লাগল …..পাথর অস্থির হয়ে পেছনের দিকে যেতে লাগল।
নুর পাথরে আচরণ দেখে মনে মনে হাসলো ।
নুর পাথরের মজা নেওয়ার জন্য আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে নুরে হাত লেগে একটি কাঁচের গ্লাস ভেঙে গেল
নুর: I am sorry……
পাথর :কোন ব্যাপার না ……
পাথর নুরকে আরো কিছু বলতে বলতে যাবে তার আগেই নুর কাচের টুকরা গুলি তুলতে লাগলো।
পাথরকে চিন্তিত লাগছিল যখন সে দেখলো নুরের আঙ্গুল কেটে গিয়েছে।
নুর :আহ ….(কষ্ট পেয়ে)
পাথর হঠাৎ করেই রেগে যেতে শুরু করল। সে অদ্ভুত আচরণ করতে লাগলো ,যখন সে রক্তটা দেখতে পেল। সে দেখল রক্তটা নুরে হাত থেকে আসছে। হ্যাঁ, তাকে চিন্তিত লাগছিল কিন্তু তার সাথে আরও অদ্ভুত কিছু হতে লাগলো।
পাথর আর নুরের দিকে না দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরে দাঁড়ালো।
পাথর: চলে যাও …..(রাগী কন্ঠে বলল)
নুর: কি ?


পাথর :আমি বললাম যাও এখান থেকে …..
নুর :আমি এটা ইচ্ছা করে করিনি ……I am sorry… পাথর :বললাম তো যাও!!!!!
নুর পাথরের জোর কণ্ঠের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গেল ।
নুর: ঠিক আছে …..
নুরের চোখ দুটোতে জল ভরপুর। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গালের ওপর গড়িয়ে পড়বে, নুর পাথরের দিকে আর একবার ছলছলো চোখে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে গেল ।
পাথরের নুরকে দেখার পর খুব কষ্ট লাগছিল ,কিন্তু তার এটা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।
নুর বাড়িতে এসে দিশাকে ফোন লাগালো।
নুর: তুই জানিস ও আমাকে ঠিক কি বলল …ও আমাকে বলল …চলে যাও এখান থেকে! ব্যাস …..আমি সত্যি ওটা ইচ্ছা করে করিনি। শুধু একটা গ্লাসই তো হাত লেগে ভেঙ্গে গিয়েছিল তা বলে আমাকে এভাবে বাড়ি থেকে বার করে দেবে।
নুর দিশা কে নিজের সব কথা বলে ফোনটা রেখে দিল। কিছুক্ষণ পর………
নুর নিজের মন ভালো করার জন্য একটা বই পড়ছিল। হঠাৎ করেই যেন ও কিছু একটা বুঝতে পারল।
নুর সেই ছুড়িটা বার করল যেটা সে জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে এনেছিল । তার চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল।
নুর :এটা ২০০ বছরের পুরনো ছুরি ………
নুর নিজের ল্যাপটপটা হাতে নিয়ে সেখানে সে খুঁজে..সেই ছুরি ও আরো অনেক কিছু তথ্য পেল !
নুর :পাথর?????না আমাকে সবটা জানতেই হবে ……(ভয় পেয়ে বলল)

নুর সোজা এসে পাথরের বাড়ির সামনে দাঁড়ালো।
পাথর এসে দরজা খুলে দিলো।
পাথর :তুমি এখানে কেন? তোমার এখানে আসা ঠিক হয়নি!!
নুর :আমি জানি তুমি কে ?
(পাথরের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো)
পাথর :কি বলতে চাও তুমি ?
নুর বাড়ির ভেতরে ঢুকে পাথরের অনেকটা কাছে গিয়ে তার চোখের দিকে তাকালো ।
নুর: তুমি সূর্যের আলোতে বাইরে যাও কিভাবে ?…..তোমার হৃদস্পন্দন ও নাই ……….
আর এই লকেট!!!…..
যদি তুমি এটা ছাড়া বাইরে যাও তাহলে তুমি পুড়ে যাবে! Am I right?……(নুরের চোখ দুটো ছল ছল করে উঠেছে)
পাথর নুরের দৃষ্টি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল ।
পাথর :আ…মি ……..আমি………
নুর: তুমি ….তুমি কি ?তাহলে এই ছুরির ব্যাপারে কি বলবে ?
নুর সেই জঙ্গল থেকে আনা ছুরিটা পাথরের সামনে বার করলো ।
নুর:So that’s mine you are a “VAMPIRE”
পাথর: ও ওয়াও ………তুমি তো দেখি ভীষণ বুদ্ধিমতি নুর !!!!আর তুমি যে ছুড়িটার কথা বলছ সেটা একটা রেপ্লিকা ……….আর ভ্যাম্পায়ারের প্রতি আকর্ষণের জন্য আমি লকেটটা পড়ি। নিজে অ্যাসাইনমেন্টের পড়াগুলোকে এতটা সিরিয়াসলি নিও না ।
(নুরকে এবার চিন্তিত লাগলো)
পাথর :এখন নিজের মনে গল্প বানানো বন্ধ করো। আমরা কখনোই এক হতে পারব না ।
(পাথর কঠোর গলায় বলল )
নুর: তাহলে আমি নিজের মনে কাহিনী বানাচ্ছি! ………
তাহলে এটাও তো তোমার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না তাইতো?…
কথাটা বলে নুর নিজের হাতের ছুরিটি দিয়ে একটা টান বসিয়ে দিল। দেখতে দেখতে হাত জুড়ে রক্তে ভর্তি হয়ে এলো।
পাথরের মধ্যে অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করা গেল । পাথর নিজের হাত দুটো শক্ত করে মুটো করল । সে নিজের কন্ট্রোল হারাতে লাগল। সে নুরের দিকে ভালোবাসায় ভরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ছুটে বাইরে পালালো ।।।

নুরের যখন চোখ খুলল সে নিজেকে নিজের বাড়িতে দেখতে পেল । সে দেখল তার হাতের কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।
নুরের চোখের তরল পদার্থ গুলো গালের ওপর গড়িয়ে পড়ল ।
সে দেখল তার পেইন্টিং তার ঘরে দেয়াল টাঙানো রয়েছে। নুর সেই ছবিটার কাছে গেল । তার চোখ দিয়ে তখনও জল গড়িয়ে চলেছে। সে একটা হাসি নিয়ে ওই ছবিটা দেখতে লাগলো।
সে খুব ভালো করেই জানে ছবিটা কে এঁকেছে ।
নুর দেখল টেবিলের ওপর একটি চিঠি রাখা । নুর চিঠিটাকে পড়তে লাগলো

“I LOVE YOU “নুর !!!!কিন্তু আমার ভালোবাসা যে অভিশপ্ত । আমি তোমার থেকে দূরে থেকেছি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয় !বরং আমি তোমাকে নিজের থেকে বাঁচাতে চেয়েছি সব সময় । আমি একটা জন্তু (পশু) নুর। তোমার আমার থেকে দূরে থাকাই ভালো । ভুলটা আমার যে আমি নিজেকে তোমার থেকে দূরে রাখতে পারিনি।
বিশ্বাস করো নুর আমি বারবার চেষ্টা করেছি নিজেকে দূরে রাখার, কিন্তু পারিনি ।
আমার তো হৃদয়ও নায় তারপরও আমি তোমার প্রতি মন হারিয়েছি।।।।।
(চিঠিটা পরতে পরতে নুর অনবরত কেঁদে চলেছে। নুরের মনে হচ্ছে যেন পাথর সামনে থেকে তাকে কথাগুলো শোনাচ্ছে ।)
ভালো থেকো নুর! আমি একজন পশু…….আর একজন পশু কখনোই তোমাকে ভালবাসতে পারবেনা। আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি সেজন্যই আমি তোমার পেছনে এসেছিলাম । শুধুমাত্র তোমার জন্যই আমি কলেজে ভর্তি হয় ।।।।
সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন নুর “I love you” আমাকে খুঁজতে এসো না ….
Take care…..
ইতি
পাথর
নুর :আমাকে ভালবাসতে শিখিয়ে তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না। (কান্না করতে করতে)
তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না …..
তুমি এতটা স্বার্থপর হতে পারো না……..
I just hate you!!!!!!
কোথায় গেছো তুমি ???
প্লিজ ফিরে এসো তোমার নুরের কাছে……..
Please……….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: