আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Last Part

আগন্তুকের পরিচয়ের আসর Last Part

Written By Taniya Parvin

পরের দিন খুবই উৎফুল্লতার সাথে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলাম।
আজকে আগন্তুকটির সাথে সামনাসামনি কথা বলেই ছাড়বো ।
দেখবো এবার সে নিজের পরিচয় না দিয়ে কোথায় যায়।

“মা আসছি”- মাকে বলে কলেজের যাওয়ার জন্য এক বুক সাহস নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ।
সারা রাস্তা মনের ভেতর আলাদা এক উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম।
হয়তো সে আগন্তুকির সাথে অবশেষে কথা বলতে পারব সেটার জন্য ।
হাসি যেন আমার অধর জোড়া থেকে সরার নাম নিচ্ছিল না।
বাস আমার গন্তব্যে দাঁড়াতেই সবার আগে ছুটে গিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম।
নামতেই চোখ গেল সেই চায়ের দোকানটার দিকে, কিন্তু একি ?আগন্তুকটিকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না ।
আর না নজর পড়লো সেই পরিচিত কালো বাইকটি।
মনের সব উৎফুল্লতা উত্তেজনা যেন সেকেন্ডের মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
আজকে কি সে আসেনি ?
নাকি তার আজকে আসতে দেরি হচ্ছে?
এসব ভাবতে ভাবতে এক বুক নিরাশা নিয়ে কলেজ গেটের দিকে হাঁটা ধরলাম।
কলেজ ক্যাম্পাসে আসতেই মাহি বলে উঠলো,
মাহি :কি ব্যাপার আজকে হৃদয় হরণীর মুখ কেমন ভার কেন ?
আমার কেন জানি মাহির কথা শুনে মনে হল ও জেনেশুনে আমার সাথে মজা করছে ।
মাহি: আজকে যে হৃদয় হরণীর তার আগন্তুকের সাথে সরাসরি কথা বলার কথা ছিল । তা সে কই?
“জানিনা কেন আজকে সে এলো না ,এমন তো কখনো হয়নি “
মাহি: দেখ কালকে এত বৃষ্টিতে ভেজার কারণে হয়তো তার এখন এখানে আসার আর ক্ষমতা নেই!
কাক ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে কিনা!
মাহির কোথায় আমার খেয়াল আসলো ,
সত্যি তো?
কালকে তো সে প্রায় সব সময়ই বৃষ্টিতে ভিজেছে।
সত্যিই যদি তার জ্বর আসে!
শরীর যদি খুব খারাপ হয়!
আমি এখন কি করে জানব সে কেমন আছে !
কোথায় থেকে খোঁজ পায় এখন আমি ?
মনটা চিন্তায় আনচান করতে শুরু করলো ।
মাহি আমাকে খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করছিল যেন আমার এমন চিন্তিত আচরণ দেখে ও মজা পাচ্ছে ।
হুট করেই আমার মাথায় একটা খেয়াল আসলো ……
“মাহি তুই কি করে জানলি সে কালকে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি গেছে ?”
মাহি আমার কথায় যেন থতমত খেয়ে গেল ।
মাহির এরূপ আচরণে আমার সন্দেহ আরো গাঢ় হল।
রুহি :আরে কালকে তো আমরা সবাই দেখলাম কেমন করে হিরো তার প্রেমিকাকে পাহারা দিতে দিতে বাড়ি দিয়ে আসলো ।
রুহির কথায় আমি অনেকটা লজ্জা পেলাম ।
হয়তো গাল দুটোতেও লালাভ আভাও ছড়িয়ে গিয়েছে।
আমাকে লজ্জা পেতে দেখে বাকি বান্ধবীরা শব্দ করে হেসে উঠলো।
আর কেউ কেউ আরও অনেক কিছু বলে আমাকে আরো লজ্জা দিতে লাগলো ।
এইসবের মাঝে মাহি এবং রুহি নিজেদের মধ্যে কিছু একটা বলল ,সেটার দিকে আমাদের কারোরই খেয়াল গেল না ।
এভাবেই দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেল।
আগন্তুকটির কোন দেখা নেই।
রোজ নতুন আশা নিয়ে বাড়ি থেকে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়। কিন্তু দিন শেষে একই হতাশা আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে।
আচ্ছা ,সে কি সত্যি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে, যে আর আসতে পারছে না?
সব আমার জন্য হয়েছে।
আমার জন্যই তাকে এতক্ষন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে।
বারান্দায় বসে বসে এই গুলোই ভাবছিলাম ।
যখন নিচে থেকে মায়ের ডাক শুনতে পেলাম। মা খেতে ডাকছে।
নিজের ভাবনাগুলো একদিকে সরিয়ে নিচে খেতে গেলাম।
খাবার মাঝে আব্বু হুট করে বলে উঠলো …
আব্বু: তানি তোমাকে আমার কিছু জরুরী কথা জানানোর ছিল ।
আব্বুর কথা শুনে আমার খাওয়া থেমে গেল। মনের ভেতরের এক আলাদা অস্থিরতা শুরু হলো।জানি না কেন ?
” জি আব্বু বলো”
আব্বু :কালকে তোমাকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে ।
কথাটা শুনেই আমার বুকের ভেতর যেন তোলপাড় হতে শুরু করলো।
“কিন্তু আব্বু আমি …..”
আব্বু আমাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো ।
আব্বু :তারা শুধু তোমাকে দেখতে আসবে আম্মুস। কিন্তু তোমার যদি তাদের দেখে মনে হয় তুমি বিয়ে করবে না, তাহলে তোমাকে কেউ জোর করবে না।
ছেলেটার বাবা আমার ব্যবসায়িক বন্ধু হওয়ায় আমি না করতে পারিনি।
কিন্তু বিয়ে যেহেতু তুমি করবে তোমার উপর কথা বলার সাধ্য আর কার আছে ।

..আব্বুর কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। আমি জানি আমার ইচ্ছা বিরুদ্ধে আমাকে আমার বাড়ির লোক কখনো জোর করবে না ।
কিন্তু তাও সেজেগুজে এক পর পুরুষের সামনে বসাটাও কোন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির থেকে কম কিছু নয়।

আব্বু: বেশি চিন্তা করো না আম্মু । যাও খেয়ে গিয়ে রুমে ঘুমিয়ে পড়ো। যা হবে কালকে দেখা যাবে ।

আব্বুর কথাটি শুনে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
আমি রুমে চলে আসতেই ডাইনিং টেবিলে আব্বু আর
মারিয়া একটু শব্দ করে হেসে উঠলো।

মারিয়া : আব্বু তুমি আপামনির মুখটা দেখেছিলে 😂!
মা: তোমরা বাপ বেটি মিলে আমার বেচারা মেয়েটার সাথে এমন করতে পারলে বল !আহারে মেয়েটা আমার।
মারিয়া : মেয়ের প্রতি দরদ দেখ খালি।
বলি তোমার মেয়ের ভালোর জন্য আমরা কত কষ্টে সারপ্রাইজ রেডি করেছি । কালকে আপামনি নিজের লাইফের বেস্ট সারপ্রাইজ পাবে বিশ্বাস করো।

কথাটি শুনে আব্বু ও মায়ের মুখে তৃপ্তিময় হাসি দেখা গেল ।

একই সময়ে অন্যদিকে ,কোন এক জায়গায় ……

একজন পুরুষ তার বারান্দায় বসে বাইরে দৃশ্য উপভোগ করছে। এমন সময় একজন মেয়ে তাকে পেছন থেকে ডেকে উঠলো।

মেয়েটি: কি প্রেমিক সাহেব নিজের হৃদয় হরণীর চিন্তায় ব্যস্ত মনে হচ্ছে !
পুরুষটি: তোর বেশি বকা স্বভাবটা কবে যাবে শুনি?
মেয়েটি: আহারে প্রেমিক পুরুষ তার হৃদয় হরণীকে তিন দিন ধরে দেখতে না পাওয়ার শোকে শুকিয়ে গিয়েছে।
পুরুষটি মেয়েটির কথা একটি বিরক্তিকর চাহনি দিল।
মেয়েটি: আবার অন্যদিকে নিজের প্রেমিক পুরুষকে না দেখতে পেয়ে হৃদয় হরনীর হৃদয়ের যে ব্যাকুল অবস্থা। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান প্রেমিক সাহেব । না হলে হৃদয় হরণী যে আপনার চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তোর হৃদয় হরণী আর একটু হলে সব বুঝে যাচ্ছিল। সন্দেহটা ঠিক জায়গায় করে ফেলেছিল ।

পুরুষটি : এরকম ভুল জায়গায় ভুল কথা বলার স্বভাব থাকলে সন্দেহ তো করবেই! সব সময় বেশি কথা বলতে চাস কেন বলতো?
তোর জন্য সে একটু হলেই আমার সব সারপ্রাইজ ডুবে যাচ্ছিল ।
এবার নিজের এই বেশি বকা স্বভাবটা পাল্টা।

মেয়েটি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগে নিচ থেকে আওয়াজ এলো।
“মুগ্ধ …..মাহি ……খাবার খেতে নিচে এসো”
ভাই ও বোন একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর একসাথে নিচে খেতে নামলো।
সবাই মিলে একসাথে বসে তারা ডিনার করছিল এমন সময় মুগ্ধর আব্বু বলে ওঠে …….
মুগ্ধর আব্বু : আমি তানিয়া আব্বুর সাথে কথা বলেছি। আমরা কালকে ওদের বাড়ি যাচ্ছি তানিয়াকে দেখতে।

মাহি : বাহ অবশেষে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার ভাবি হতে চলেছে। আমরা একসাথে থাকব কি মজা !

মুগ্ধ :এই মজা বেশিদিন থাকবে না !খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে বাড়ি থেকে বিদায় করছি ….তখন তুমি অন্য কারোর ভাবি হয়ে যাবে।

মাহি : দেখেছো আব্বু ! নিজের দ্বারা তো কিছুই হলো না শেষে যা করার আব্বুকেই করতে হলো।
মুগ্ধ: তুই আবার বেশি কি বলছিস! তোর বন্ধুর সাথে তো তুই আমার হেল্প করলি না !
মাহি :কেন করব?
তুই আমার ভাই বলে কি আমার বান্ধবী কুরবান করে দেবো ? পছন্দ যেহেতু তুই করেছিস রাজিও তোকে একাকেই করাতে হবে। তাও নিজে থেকে। আমার ভাই বলে তুই পার পেয়ে যাবি না । আমার বান্ধবী কোন ফেলনা নয় যে তাকে আমার ভাইয়ের গলায় আমি ঝুলিয়ে দেব । নিজের থেকে তার মন জয় করে তাকে তুই বিয়ে করবি । আমার থেকে কোন আশা রাখবি না!

মুগ্ধ : তোর আর হেল্পের আমার দরকার নেই .. কালকে এই আগন্তুক তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।
তার লাইফের সব থেকে বড় সারপ্রাইজ হয়ে এই মুগ্ধ এহেসান খুব তাড়াতাড়ি আসছে।
বাকিরা সবাই মুগ্ধের কথা শুনে হাসলো।
মুগ্ধ খুব খুশি খুশি মেজাজে ঘুমাতে রুমে গেল ।
রুমে গিয়ে তার দেয়ালে টাঙানো একটি হাতে আঁকা মেয়ের ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সে বলে উঠলো ,
“আর মাত্র একটা দিন প্রেয়সী ,খুব তাড়াতাড়ি আগন্তুক তার নিজের পরিচয় আপনার সামনে নিয়ে আসবে। খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে নিজের বাড়িতে এবং তার জীবনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা সে করতে চলেছে। তৈরি থাকুন! “

বলে সে ঘুমাতে গেল ।

সকালে …….
মা: এই শাড়িটা পর…..এই শাড়ি টা পড়ে খুব সুন্দর লাগবে ….
মারিয়া: তুমি না এই শাড়িটার সাথে এই নেকলেস গুলো পড়বে ঠিক আছে !ভীষণ সুন্দর লাগবে এইটার সাথে এটা পড়লে ।
আমি শুধু বসে বসে আমার মা এবং বোনের কাজগুলো দেখছি।
আর আমার এই নেংটি ইদুরের মত বোনটা…ঘন ঘন রং পাল্টায় …গিরগিটির থেকেও খারাপ ।
এই দুদিন আগে সে জিজু জিজু করে জিজ্ঞাসা করে আমার মাথার ঘিলু পর্যন্ত নাড়িয়ে দিচ্ছিল । আর আজকে দেখো …..
এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন আজকেই আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেবে।
এই মেয়েকে যদি আমি আমার হাতে পাইরে…..একে যে কি করবো আমি খুব ভালো বুঝতে পারবে?
কটাকার বিনিময় নিজে বিক্রি হয়েছে আমি দেখে নেব ……
মা : তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যা…..তারা এলো বলে!
আমার কোন কথা না শুনেই মা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মারিয়া : তুমি কোন শাড়িটা পড়বে সবুজটা না লালটা? আমার মনে হয় তোমাকে সবুজটা থেকে লালটাতে বেশি ভালো লাগবে….মায়ের কথা ছাড়ো তো তুমি লালটাই পারো ।
আমি উঠে গিয়ে সোজা মারিয়ার একটা কান টেনে ধরলাম।
মারিয়া :কি করছো? লাগছে তো ,ছাড়ো !
“আমি কি করছি ? তুই কি করছিস রে?
তুই আগে বল দুদিন আগে জিজু জিজু বলে গেছো বাঁদরের মতো করে এখানে একবার ওখানে একবার লাফিয়ে বেড়াচ্ছিলিস তুই ……
আর আজকে তুই আমাকে একটা অন্য ছেলের সামনে সেজেগুজে যেতে বলছিস । “
মারিয়া আমার কথাটা শুনে একটা শুকনো আব ঘিটলো।
মারিয়া : আরে, তোমার বিয়ে কি আর কি হয়ে যাচ্ছে নাকি তোমাকে তো শুধু দেখতে আসছে বলো….
হাই মা ডাকছে আমাকে নিচে থেকে , না এক্ষুনি যাব আর এক্ষুনি আসবো ঠিক আছে? তুমি তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে নাও ঠিক আছে ।
বলেই বাঁদরটা লাফাতে লাফাতে আবার নিচে নেমে গেল।
মা ডাকছে না! বলি আমি কি কান আলমারির ভেতরে রেখে ঘুরি ….যে ও একা মায়ের ডাক শুনতে পেল আর আমি পেলাম না । আসুক আজকে একবার । ভালো করে হাতে পায়।
কিছুক্ষণ পর মা আর মারিয়া মিলে আমাকে জোর করে রেডি করিয়ে দিল ।
আব্বুর ডাক শুনতে পেলাম, মেহমান চলে এসেছে ।
হুট করে যেন বুকটা ভার হয়ে এল । কেন জানি কান্না কান্না পাচ্ছে ।
বারবার আগন্তুক তার কথা মনে পড়ছে ।
কিন্তু মা আব্বুকে কি বলবো? কি করে বলবো? আমি এমন একটা মানুষকে ভালবাসি যার মুখটা পর্যন্ত আমি দেখিনি, যার নামটা পর্যন্ত আমি জানিনা । তারাও কি আমার এই কথাই বিশ্বাস করবে ।
কিছুক্ষণ পর মারিয়া এসে আমাকে সাথে করে নিচে নিয়ে গেল ।
কেন জানিনি সকালে ওর ওপর যা রাগ ছিল সব মিশে গেল।
কি বলবো, কি করবো কিছুই মাথায় আসছিল না আমার।
আমাকে নিয়ে গিয়ে দুই মেয়ের মাঝে বসিয়ে দিল। তাদের মুখের দিকে তাকানোর পর্যন্ত ইচ্ছা আমার ছিল না ।
হুট করে একটা পরিচিত আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।
” ভাবি মুখটা তোলো ….ভালো করে মুখটা দেখি “
খুবই অবাক হয়ে মাথাটা তুলতেই দেখতে পেলাম , আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু মাহি ! আমার পাশে বসে আছে ,এবং ওই আমাকে ভাবি ডাকছে ।

কিছুক্ষণের জন্য মাথা পুরো শূন্য হয়ে গেল ।
কিছুই বুঝতে পারলাম না আমার চারপাশে কি হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর তাদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম ,মাহির পরিবারের লোকজন মাহির বড় দাদার জন্য আমাকে দেখতে এসেছে।
মাহির উপর রাগ না ক্ষোভ না ঠিক এই মুহূর্তে কি আসছে আমার আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না।
মাহি সব জেনেশুনে আমার সাথে এটা কি করে করতে পারলো ।
এবার তো মনে হচ্ছে আমি এখানেই বসে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে লাগি।
কিছুক্ষণ পর মাহি বলে উঠলাম ,

মাহি: আমার মনে হয় ছেলে এবং মেয়েকে নিজেদের সাথে একান্তই কিছু কথা বলতে দেয়া দরকার ।
মাহির কথায় বাড়ির সবাই সায় দিল।
মারিয়া আমাকে এবং মাহির দাদা মুগ্ধকে আমার রুমে নিয়ে এলো।
আমাদেরকে বসতে দিয়ে বলল তোমরা এখানে কথা বলো আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।
মাহির দাদা আমার খুব বেশি একটা পরিচিত মানুষ না। তাকে গত দু থেকে তিনবার আমি দেখেছি এর বেশি তার সম্পর্কে কিছুই জানা নেই ।
আমি খুবই অস্বস্তিকার একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলাম ।
তখন তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো আমার মনে কথাটা আমি তাকে বলতে পারতাম ।
আমি কিছু বলতে যাব তখন মুগ্ধই নিজে থেকে বলে উঠলো,
মুগ্ধ : আপনার থেকে কোন কিছু শোনার আগে আমি আপনাকে যে কিছু একটা দিতে চাই ।
সে পকেট থেকে একটা ছোট্ট বাক্স বার করলো এবং সেটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।
তারপর সে নিজে উঠে দাঁড়ালো তারপর বলল
“আশা করছি এটা পরে আপনি আপনার উত্তর জানাবেন “
তারপর সে চলে যাওয়া মুখি হয়েও আবার ফিরে এলো। এসে আমার রুমের বারান্দায় ঝোলা সেই আগন্তুকের কালো হুডিটা হাতে নিল ,
মুগ্ধ : আমার আমানত আমি নিয়ে যাচ্ছি। আপনার যদি এটা আবার নেয়ার থাকে আমার থেকে আমার বাড়িতে এসে এটা নিয়ে যাবেন ।
তার কথায় অবাকতার শেষ পর্যায়ে চলে গেলাম আমি।
সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ ভাবে বাক্সটার দিকে চেয়ে থাকলাম ।
তারপর হুট করে বাক্সটা খুলতেই একটি চিরকুট বেরিয়ে এলো আমার সামনে।
কাঁপা কাঁপা হাতে খুলতেই দেখলাম তাতে লেখা ,ওহে হৃদয় হরনী ….
এই আগন্তুক যে তার কথা রেখেছে ।

হৃদয় হরনীকে তার রাজ্যের রানী করতে সে এসেছে। আপনি বলুন আপনি কি হবেন আমার ছোট্ট রাজ্যের রানী…….
ইতি, সেই আগন্তুকটি।
চিরকুটটি পড়ার পর চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলাম না । বিনা অনুমতিতে সে আমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
হঠাৎই শুনলাম দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ।
মাথা তুলে তাকাতেই দেখলাম মাহি দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ।
মাহি : কি ভাবি কেমন লাগলো ননদের সারপ্রাইজ?
মাহির বাচ্চা…….সব জেনে আমার সাথে এরকম করেছিস ……..তাই না! দাড়া তোকে একবার হাতে পায়।

বলে ওর পেছনে ছুটতে শুরু করলাম।
নিচে আমাদের বিয়ের কথা ঠিক হতে লাগল।
গত চার দিনের লুকিয়ে থাকা হাসিটা সব আনন্দে বেরিয়ে এলো মুখ থেকে।
এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ যদি কেউ থেকে থাকে হয়তো সেটা আমি।
অবশেষে পেলাম আমার সেই আগন্তুকের দেখা……….

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: