কলকাতা, আমার তিলোত্তমা The city of joy

কলকাতা, আমার তিলোত্তমা The city of joy

Written By Taniya Parvin

কলকাতা, আমার তিলোত্তমা The city of joy
বাঙালির সকল অনুভূতির মধ্যে সবথেকে প্রগাঢ় অনুভূতির স্থান হচ্ছে কলকাতা ।
কলকাতা নিয়ে লেখার অর্থ বাঙালির ভালোবাসা নিয়ে লেখা ,বাঙালির স্বপ্নের শহর নিয়ে লেখা ,বাঙালির প্রথম অনুভূতি নিয়ে লেখা ।
কলকাতা নিয়ে কখনো লেখা সমাপ্ত করা যায় না। কলকাতা প্রতিনিয়ত বাঙালির মধ্যে নতুন করে জায়গা গড়ে তোলে। যেটা মেটানো সম্ভব নয়।


আসুন জেনে নেওয়া যাক কলকাতার ইতিহাস এবং প্রাচুর্য সম্পর্কে ।
৩০০ বছরের পুরনো সহজ হচ্ছে কলকাতা।
নিজের ইতিহাস মডার্ন টেকনিকগুলি নিয়ে ইন্ডিয়া সবথেকে দ্রুত ও বিকাশিত শহরের মধ্যে একটি। কলকাতা ইন্ডিয়ার থার্ড মেট্রোপলিটন শহর এবং থার্ড হাইয়ার জিডিপি যুক্ত শহর।
ইন্ডিয়ার কালচারাল ক্যাপিটাল এবং পশ্চিমবঙ্গ এর রাজধানী কলকাতা।
ইন্ডিয়ার স্ট্রিট পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গা নদীর কিনারায় অবস্থিত শহর হচ্ছে কলকাতা ।
কলকাতার পপুলেশন ৮০ লাখেরও বেশি, কলকাতার মেট্রোপলিটন এরিয়া থেকে নিয়ে ধরলে প্রায় 1.5 কোটির বেশি পপুলেশন যুক্ত শহর হচ্ছে কলকাতা ।


৩০০ বছর আগে ব্রিটিশরা নিজেদের থাকার এবং ব্যবসা সুবিধার্থে লন্ডনের মতই গঙ্গা নদীর তীরে সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কালিকাটা এই তিনটি গ্রামকে যুক্ত করে তৈরি করেছিল কলকাতা।
তখনকার সময়ে এটি ক্যালকাটা নামে পরিচিত ছিল। 1773 থেকে 1911 পর্যন্ত কলকাতা ভারতের রাজধানী ছিল। মানে আজকের বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের রাজধানীও ছিল কলকাতা ।
২০০১ সালে বাংলা সরকার ক্যালকাটা নামটি পাল্টে কলকাতা করে দেন ।
সেকেন্ড বিগেস্ট ফুটবল স্টেডিয়াম থেকে থার্ড বিগেস্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম ,ফার্স্ট মেট্রো থেকে ফাস্ট পোলো ক্লাব, ফাস্ট অস্কার থেকে ফার্স্ট নোবেল প্রাইজ ,ফার্স্ট কফি হাউস থেকে ফাস্ট নিউজ পেপার, ফাস্ট মোবাইল থেকে ফাস্ট টিভি টাওয়ার, প্রেসিডেন্সি থেকে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ,রবীন্দ্র নাথ থেকে নেতাজি ,ফার্স্ট আন্ডারওয়াটার মেট্রো থেকে ফার্স্ট ক্যান্টিলিভারব্রিজ, মুঘল থেকে নবাব, নবাব থেকে ব্রিটিশ রাজ ,ব্রিটিশ রাজ থেকে আজ পর্যন্ত কলকাতা কখনো পুড়ানো হয়নি।
সময়ের সাথে সাথে এই শহরও পাল্টেছে কিন্তু এর বাঙালিয়ানা কালচার আর্কিটেকচার কোন পরিবর্তন আসেনি।
কলকাতা কখনো স্বপ্ন দেখতে ভোলেনা। জয় আর হ্যাপিনেস হচ্ছে এই শহরের লাইফ লাইন। উৎসব ছোট হোক কিংবা বড় এর আনন্দে কখনো কমতি আসে না। আজকে কলকাতা ডেভলপমেন্টাল সিটি ইন্ডাস্ট্রি, এডুকেশন ,ট্রেড ,ব্যাংকিং সেক্টর ,ইকো হাফ ,সফটওয়্যার হাফ ,ফিসিং হাফ, ফিল্ম সিটি হাফ, এগ্রিকালচার হাফ আরো কত কি।


এই সব থেকে কলকাতার ইকোনোমিকে বুস্ট পাওয়া যায়।
জিডিপি এবং ফাইনান্স এর গ্রোথ স্টেবেল থাকে ।
তাই কলকাতা ইন্ডিয়ার থার্ড রিচেস্ট সিটি ।
ব্রিটিশ রাজের সময় লন্ডনের পর কলকাতা সেকেন্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্ট সিটি ছিল পুরো বিশ্বের মধ্যে ।
কালচার ,ট্রেড ,বিজনেস, মেজর ইউনিভার্সিটি, ইকোনমি ইন্ডাস্ট্রি ,কলকাতার মধ্যে কনট্রাক্ট করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়ার মধ্যে সবথেকে পুরনো চিড়িয়াখানা কলকাতার মধ্যে অবস্থিত ।
আলিপুর চিড়িয়াখানা যেখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে আরও অনেক প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় । আলিপুর চিড়িয়াখানা খোলা হয়েছিল 1875 সালে।

1858 সালে বিশ্বের প্রথম পোলো ক্লাব কলকাতাতেই বানানো হয়েছিল। এখন তো ইউরোপের অনেক শহরে পলো ক্লাব পাওয়া যায় ।

এটা তো সবাই জানে বাঙালীরা বই পড়তে কতটা ভালোবাসে ।
কিন্তু এটা কি জানেন দুনিয়ার সেকেন্ড লার্জেস্ট বুক মার্কেট কলকাতার মধ্যে অবস্থিত ।
কলেজস্ট্রিট বুক মার্কেট ইন্ডিয়ার পাশাপাশি পুরো বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কেট । বলা যায় কোন বই যদি এখানে না পাওয়া যায় তাহলে সেটি বিশ্বের কোথাও পাওয়া যাবে না ।

কলকাতাতে অবস্থিত আছে এশিয়ার লার্জেস্ট প্লানেটেরিয়াম বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম যেটাকে ১৯৬৩ তে স্থাপন করা হয়েছিল।

কলকাতাতে অবস্থিত সাইনসিটি ইন্ডিয়ার সাবকন্টিনেন্টাল এর লার্জেস্ট সেন্ট্রাল ফর দ্য কালচার সাইন্স।

কলকাতায় ইন্ডিয়ার একমাত্র শহর যেখানে 6 জন নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ।
1913 সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং 2019 এ অভিজিৎ ব্যানার্জি ।
প্রথম অস্কার কলকাতা শহরে পেয়েছিল। সত্যজিৎ রায় কে অস্কার দেয়া হয়েছিল তার বাঙালি ফিল্ম পথের পাঁচালীর জন্য।

কলকাতা ইন্ডিয়ার একমাত্র শহর যেখানে ইলেকট্রিক ট্রাম চলে। 1992 থেকে কলকাতায় ট্রাম চলাচল শুরু হয়।

দেশের সবথেকে পুরনো পোর্ট কলকাতা তে অবস্থিত। রেজাল্ট নাইন পোর্ট হুগলি নদী যেটি খিদিরপুর পোর্ট নামে পরিচিত এটা ইন্ডিয়ার একমাত্র রিভার লাইন পোর্ট।

বিশ্বের থার্ড লার্জেস্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম ইডেন গার্ডেন কলকাতাতে অবস্থিত।
কলকাতাতে অবস্থিত ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব ccfc বিশ্বের দ্বিতীয় সব থেকে পুরনো ফুটবল ক্লাব ।

সল্টলেক স্টেডিয়াম বিশ্বের সেকেন্ড লার্জেস্ট ফুটবল স্টেডিয়াম 1.5 লাখ সিট ক্যাপাসিটির সাথে ।
২০১৭ তে ফিফা আন্ডার ১৭ ওয়ার্ল্ড কাপ ও কলকাতাতে হোস্ট করা হয়েছিল।
এছাড়াও মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের মতো পুরনো ফুটবল ক্লাবও কলকাতাতে রয়েছে।
আপনি কি জানেন ইন্ডিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম মোবাইল কলকাতাতে ব্যবহার করা হয়েছিল ।
১৯৯৫ এ চিফ মিনিস্টার জ্যোতি বসু প্রথম ফোন ইন্ডিয়ার ইউনিয়ন মিনিস্টার কে করেছিলেন ।

এমনকি ইন্ডিয়ার মধ্যে প্রথম টিভি কলকাতাতেই চালু হয়েছিল ।১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ কলকাতার নিয়োগে ফ্যামিলি টিভি ব্যবহার করেছিলেন।

ইন্ডিয়ার প্রথম মেট্রো কলকাতাতে চালু হয়েছিল ।১৯৮৫ তে কলকাতার মধ্যে মেট্রো চলাচল শুরু হয় আর সবথেকে পুরনো মেট্রো কলকাতাতেই রয়েছে।

ইন্ডিয়ার বাকি সিটির মতো কলকাতাতেও কিছু স্পেশাল খাবার রয়েছে যেমন রসগোল্লা, সন্দেশ ,মিষ্টি দই ,সিঙ্গারা ,দুধ মালায়, পায়েশ ,খিচুড়ি,,কষা মাংস, মাছের ঝোল ,চপ ,তেলেভাজা, ঘুগনি ,কলকাতা স্টাইল রোল, কলকাতা স্টাইল বিরিয়ানি, চিকেন কাবাব, ফুচকা আরো কত কি ।

কলকাতার শিক্ষার হার হচ্ছে ৯৩.৪% ।
কলকাতার মধ্যে অবস্থিত আছে ইন্ডিয়ার কতগুলি বেস্ট ইউনিভার্সিটি। যেমন -যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ,ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি,প্রেসিডেন্সি ,IIM.
কলকাতা ইন্ডিয়া NO 1 সুরক্ষিত শহর। পরপর পাঁচ বার ইন্ডিয়ার সব থেকে সুরক্ষিত সিটি রাঙ্কিং এর মধ্যে অবস্থিত। ইন্ডিয়ার ক্রাইম বিউরো রিপোর্টের অনুসারে কলকাতা ইন্ডিয়ার সব থেকে সুরক্ষিত একটি শহর।

ইন্ডিয়ার মধ্যে সবথেকে বেশি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও কলকাতাতে চলাচল করে।
সবথেকে সস্তায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট একমাত্র কলকাতাতেই পাওয়া যায়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ইন্ডিয়ার টপ ফাইভ বিজিএস এয়ারপোর্ট ।
কলকাতায় পাঁচটি বড় রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। যেমন- হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ,শিয়ালদা রেলওয়ে স্টেশন ,শালিমার রেলওয়ে স্টেশন ,সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশন ,কলকাতা রেলওয়ে স্টেশন। তার মধ্যে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ইন্ডিয়া সবথেকে বড় এবং বিজিএস রেলওয়ে স্টেশন ।
কলকাতা প্লানেট,নিউমার্কেট ,হাতিবাগান ,কম পয়সায় শপিং করার জন্য বেস্ট জায়গা।
কলকাতার আর একটা জিনিস যেটা ইন্ডিয়ার বাকি শহরের তুলনায় কলকাতাকে আরো স্পেশাল করে তোলে। আর সেটি হল কস্ট অফ লিভিং।


কলকাতা সবার জন্য হয় সে বড়লোক হয়তো সে গরিব।
কলকাতাতে অবস্থিত ইকো পার্ক থেকে নিকো পার্ক, ময়দান থেকে পার্ক স্ট্রিট ,বিশ্ববাংলা গেট থেকে রবীন্দ্র তীর্থ ,আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে লাইব্রেরী ,ফোর্ট উইলিয়াম থেকে মাদার হাউস, প্রিন্সেপ ঘাট থেকে মিলেনিয়াম পার্ক ,ভ্যাক্স মিউজিয়াম থেকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া থেকে রেসিংকোর্স ,ঢাকুরিয়া লেক থেকে নন্দন ,কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, নাখোদা মসজিদ থেকে ক্যাথিদ্রিয়াল চার্জ ,পাটুলি লেক থেকে ফ্লোটাল মার্কেট ,মার্বেল হাউজ থেকে টেগর হাউস ,হাওড়া ব্রিজ থেকে হুগলি ব্রিজ ,বাগবাজার হাট থেকে কুমোরটুলি এগুলো হচ্ছে কলকাতার আলাদা আলাদা ভেরিয়েশন।


কলকাতার সম্পর্কে লিখে কখনো শেষ করা যায় না।
কলকাতাকে যত জানবে তত কম হবে।
কলকাতা হচ্ছে স্বপ্নের শহর কলকাতা হচ্ছে আমার শহর।।।।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share: