চায়ের আবিষ্কার সম্পর্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পটি চীনের সম্রাট শেন নং (Shen Nong)-এর সময়কার, প্রায় ২৭৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, একদিন সম্রাটের জন্য ফুটন্ত গরম পানির পাত্রে হাওয়ায় উড়ে আসা কিছু চা পাতার টুকরো পড়ে যায়। এর ফলে এক নতুন ধরনের সুগন্ধযুক্ত পানীয় তৈরি হয়, যা পান করার পর তিনি সতেজতা অনুভব করেন। এভাবেই চা আবিষ্কৃত হয় এবং চীনে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
পরবর্তীকালে, তাং রাজবংশ (৬১৮-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ)-এর সময় চা পান চীনের সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে। তারপর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে চা জাপানে পৌঁছে এবং জাপানি চা সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। ইউরোপে চায়ের প্রবেশ ঘটে ১৬শ শতকে, যখন পর্তুগিজ ও ডাচ বণিকরা চা আমদানি শুরু করে। ব্রিটেনে ১৭শ শতকে চায়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে, বিশেষ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে এটি বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে ওঠে।
চা শুধু একটি পানীয় নয়, এটি স্বাস্থ্য উপকারিতার এক অনন্য উৎস। বিভিন্ন ধরনের চা যেমন গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, উলং টি, হোয়াইট টি ইত্যাদি আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে।
চায়ের উৎপাদন ও বাণিজ্যিকীকরণ এক বিশাল শিল্প। চা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন দেশ আলাদা কৌশল অবলম্বন করে।
চীন মূলত গ্রিন টি, উলং টি ও হোয়াইট টি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। চায়ের পাতাগুলো হালকা শুকানোর পর ভাঁজ করে শুকিয়ে নেওয়া হয়, যাতে স্বাদ ও গন্ধ অটুট থাকে।
ভারতে দার্জিলিং, আসাম, ও নীলগিরির চা বিখ্যাত। ভারতে ব্ল্যাক টি-ই বেশি উৎপাদিত হয় এবং এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চা রপ্তানিকারক দেশ।
শ্রীলঙ্কা মূলত ব্ল্যাক টি উৎপাদন করে। চা পাতাকে রোলিং, অক্সিডেশন এবং শুকানোর মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
জাপানে প্রধানত গ্রিন টি উৎপাদন করা হয়। সেনচা, ম্যাচা ও জেনমাইচা এখানে জনপ্রিয়। চায়ের প্রক্রিয়াকরণে বাষ্প পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা চায়ের স্বাদ সংরক্ষণে সাহায্য করে।
কেনিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্ল্যাক টি উৎপাদনকারী দেশ। CTC (Crush, Tear, Curl) পদ্ধতিতে চা উৎপাদন করা হয়, যা দ্রুত প্রস্তুত করা সম্ভব এবং চা ব্যাগ তৈরির জন্য আদর্শ।
তাইওয়ান উলং টি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এই চা আংশিক গাঁজন করে বিশেষ স্বাদ ও গন্ধ সংরক্ষণ করা হয়।
চা শুধুমাত্র এক কাপ গরম পানীয় নয়, এটি হাজার বছরের সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য উপকারিতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিটি দেশের চা উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং স্বাদ আলাদা হলেও, এটি সারা বিশ্বে মিলন ও প্রশান্তির প্রতীক হয়ে আছে।
আপনি কি ধরনের চা পছন্দ করেন? 😊
One Response
Aai lekhata kemon hoyeache